ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বুধবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

পুলিশের আটক বাণিজ্য চরমে

বরোধের কারণে ঢাকায় আসার কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না রাজধানীর আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু নাসের মোহাম্মদ তৌহিদ। বাধ্য হয়ে তিনি বন্ধু নাদিমকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসেন ২২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। সেদিনই মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া অতিরিক্ত আরোহী নেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই বিধিনিষেধের কথা তারা জানতেন না। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে তাদের থামানো হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেলে দুজন ওঠায় তৌহিদ ও তার বন্ধু নাদিমকে আটক করা হয়। কিন্তু দুপুর ১২টায় আটক করা হলেও তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। এভাবেই পুলিশের আটক বাণিজ্যের ফাঁদে ধরা পড়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুজন ছাত্র।
প্রায় এক মাস ধরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে আগুন ও পেট্রলবোমা হামলার আশংকায় দেশজুড়ে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের বর্বরতম হামলায় নিরীহ সাধারণ মানুষ দগ্ধ হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় এসব ঘৃণিত নাশকতাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার অংশ হিসেবে গ্রেফতার অভিযান চলছে। কিন্তু এ অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ পুলিশের হাতে হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী মহল থেকে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি যাচাই করতে যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিম ১০ দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তথ্যানুসন্ধান চালায়। এ অনুসন্ধানেই অভিযোগের শুধু সত্যতায় ধরা পড়েনি, বেরিয়ে এসেছে আটক বাণিজ্যের নামে পুলিশ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে। লেগুনাচালক স্বামীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে একজন স্ত্রীকে তার কানের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে।
দুই ছাত্রের হয়রানি কাহিনী : ঘটনার দিন আটকের পর পল্টন থানার উপপরিদর্শক সফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র নাদিম ও তৌহিদকে বসিয়ে রাখেন বিজয়নগর সাব্বির টাওয়ারের গলিতে রাখা পুলিশের রিকুইজিশন করা লেগুনা গাড়িতে। দীর্ঘ সময় হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়ির সঙ্গে তাদের বেঁধে রাখা হয়। সঙ্গে চলে এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় ও অশ্লীল ভাষায় গালি। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে এসআই সফিকুলের সঙ্গে দায়িত্ব পালনরত কনস্টেবল রেজাউল তাদের বলেন, আপনারা উত্তরবঙ্গের লোক বোকা, স্যারকে কিছু দিলেই তো ছাড়া পেয়ে যাবেন। কনস্টেবল রেজাউলের কাছে তারা জানতে চান, স্যারকে কত টাকা দিতে হবে। কনস্টেবল বলেন, হাজার দশেক টাকা দেন। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। নাদিম বলেন, আপনার স্যারকে বলেন, আমি পুলিশের ছেলে। আমার বাবা পুলিশে চাকরি করতেন এখন অবসরপ্রাপ্ত। এ কথা শুনে কনস্টেবল তাকে বলেন, পুলিশ কেন মন্ত্রীর ছেলে হলেও টাকা লাগবে। একপর্যায়ে নাদিম ডিএমপির আরেক থানায় কর্মরত শামীম নামে তার এক পূর্বপরিচিত পুলিশ সদস্যকে ফোন করে বিষয়টি জানান। সবকিছু শুনে শামীম নামের ওই পুলিশ সদস্যও তাদের বলেন, পুলিশ যখন ধরেছে তখন টাকা দিতেই হবে, যা টাকা চায় কম-বেশি দিয়ে চলে যাও। এরপর তাদের আরও কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে এক সাংবাদিকের সহায়তায় পল্টন থানার ওসি মোর্শেদ আলমের হস্তক্ষেপে তারা ছাড়া পান।
তবে এটি কোনো একটি বিচ্ছিন্ন বা ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বলা যেতে পারে, আটক বাণিজ্য ও হয়রানির একটি খণ্ডচিত্র। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে পুলিশি হয়রানি ও আটক বাণিজ্যের এমন একাধিক ঘটনা জানা গেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। ২১ জানুয়ারি রাত ৮টায় মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা হাজতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। থানার সামনে আটক হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা ঘোরাফেরা করছেন। যাদের অনেকেই স্বজনকে ছাড়ানোর জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্ন চ্যানেলে তদবিরে ব্যস্ত। কেউ কেউ থানা ভবনের পেছনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে নিচু স্বরে গোপন সমঝোতা সেরে আটক ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। এ সময় থানার সামনে কথা হয় মোহাম্মদপুর নভোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, তার আÍীয় কামরুলসহ চারজনকে তাস খেলা অবস্থায় পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। বাকি তিনজন হলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জসিম, সিএনজিচালক জালাল ও চা বিক্রেতা রোমান। নভোদয় হাউজিং এলাকা থেকে তাদের ধরে এনেছে মোহাম্মদপুর থানার এসআই রাজিব মিয়া। আটক ব্যক্তিদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন লাল মিয়া। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি এ বিষয়ে সহায়তা পেতে অনুরোধও করেন। কিন্তু পাশে একজন কনস্টেবল থাকায় তিনি বেশি কিছু বলতে চাননি।
এদিকে এই কেসস্টাডির দ্বিতীয় ধাপে পরদিন যুগান্তরের পক্ষ থেকে সিএমএম কোর্টে গিয়ে ভিন্ন চিত্র ধরা পড়ে। জানা গেল, আটক চারজনের মধ্যে কামরুল ও রোমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। শুধু গাড়িচালক জসিম ও সিএনজিচালক জালালকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর থানার একটি সূত্র জানায়, বিশেষ সমঝোতায় রাতেই কামরুল ও রোমানকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। যার সত্যতা মেলে লাল মিয়ার অস্বাভাবিক কথায়। তিনি যুগান্তরকে মোবাইল ফোনে বলেন, না ভাই, পুলিশ ওদের তো ছাড়েনি। আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর আদালত থেকে পাওয়া তথ্যটি জানানো হলে লাল মিয়ার ভোল পাল্টে যায়। তিনি বলেন, না ভাই এসআই রাজীব খুব ভালো লোক। তিনি তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা খুব খুশি। এতেই বোঝা যায়, কী রকম অবস্থায় কিভাবে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলে সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এ রকম কথা বলে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় ব্যাপক আটক বাণিজ্য হচ্ছে- এমন সংবাদ জানান পশ্চিম থানারই এক নির্ভরযোগ্য সোর্স। তথ্য আসে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে রাতভর আটকে রেখে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এরপর টাকা-পয়সা নিয়ে ছাড়া হচ্ছে ভোরের আলো ফোটার আগে আগে। তাই যুগান্তরের অনুসন্ধান সেল এবার ভোরবেলার প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হয় উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায়। খোঁজ মেলে পুলিশের আটক বাণিজের শিকার ওয়ালিউল্লাহ নামের এক যুবকের। ওয়ালিউল্লাহ সপরিবারে থাকেন তুরাগ থানা এলাকার ফুলবাড়িয়া বস্তিতে। তিনি সোনারগাঁও জনপথ রোডে (খালপাড় থেকে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত) যাত্রীবাহী লেগুনা গাড়ি চালান। ওয়ালিউল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, ১৪ জানুয়ারি তাকে থানা পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। থানা হাজতে রেখে ১০ হাজার টাকা চায়। কিন্তু তিনি টাকা দিতে পারেননি। টাকা না পেয়ে পুলিশ তাকে তিন পুরিয়া গাঁজা দিয়ে আদালতে পাঠায়। পরে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি জামিন পান। ওয়ালিউল্লাহ বলেন, আমার কপালটাই খারাপ। না হলে পুলিশের নজর কেন আমার ওপর পড়বে? ১৭ জানুয়ারি আমি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছি। থানার ওসির গাড়িচালক মোতাহার স্যার গাড়ি থামিয়ে আমার কলার চেপে ধরল। চড়থাপ্পড় দিয়ে বলল, থানায় চল। আমি বললাম, স্যার, আমার অপরাধ কি? মোতাহার স্যার বলল, থানায় চল অপরাধ বুঝাব।
এরপর তাকে রাতে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। পুলিশ টাকা আনতে বলে। স্বামীর আটকের খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন ওয়ালিউল্লাহর স্ত্রী বেবি। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারটির জমানো কোনো টাকা ছিল না। তাই বেবি সেদিন আর তার স্বামীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারেননি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেবি প্রতিবেদককে বলেন, ওরে ছাড়ানোর জন্য হয়রান-পেরেশান হইছি। থানার স্যারগো হাতে-পায়ে ধরছি, কিন্তু কারও মন গলে নাই। ভোরে আমার কানের একটা দুল বিক্রি করছি ১৫ হাজার টাকায়। হেই টাকা থানার স্যারগো হাতে তুইল্যা দেওনের পর সকাল ৮টায় আমার স্বামীরে ছাড়ছে। কিন্তু এসআই হযরত স্যার আমার স্বামীর মোবাইল ফোনটা নিয়া নিছে। ওইটা আর ফেরত দেইন্যাক্ক্যা। এ অন্যায়ের বিচার আল্লাহর কাছে দিছি। ওয়ালিউল্লাহ বলেন, তার দুই শিশু সন্তান ৭ বছরের ছেলে ইয়াসিন ও ৪ বছরের মেয়ে অন্তরাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে তার দিন চলে। এর মধ্যে পুলিশের এই উৎপাতের কারণে তার জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার আটক বাণিজ্যের শিকার আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর দেখা মিলল। এদের একজন সোনারগাঁও জনপথ সড়কের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আবদুল বারেক। তার দেশের বাড়ি ফরিদপুর। থাকেন তুরাগ এলাকার টেকপাড়ায়। ৪ জানুয়ারি তিনিও পুলিশের আটক বাণিজ্যের শিকার হন। বারেক বলেন, রাস্তায় ভ্যান লয়া খাড়াইয়া আছিলাম। থানার পুলিশ এসে আচমকা আমাকে কয়েকটা চড় মারল। এরপর আমার গ্যাঞ্জি ধরে টানতে লাগল। আমি বললাম স্যার, আমার অপরাধ কি? পুলিশের লোকরা বলে কোনো অপরাধ নাই। দুই হাজার টাকা লাগব- দে। টাকা নাই বইল্ল্যা অনেক কান্নাকাটি করছি। কিন্তু পুলিশ ছাড়ে নাই। পরে ১২শ টাকা দিয়া ছাড়া পাইছি।
আরেক ভুক্তভোগী কুড়ানো টুকরো ময়লা কাগজের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর। সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ফুটপাত ঘেঁষে তার টং দোকান। তার বাড়ি ভোলার বড়নদী গ্রামে। থাকেন বস্তিতে। ১৭ জানুয়ারি তাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ধরে নিয়ে যায় ওসির গাড়িচালক মোতাহার। জাহাঙ্গীর বলেন, এই রোডে কয়েকটা গাঁজার স্পটও আছে। পুলিশকে টাকা দিয়েই এখানে গাঁজার ব্যবসা করে শুক্কুর, মনির, সবুজ, রাজু, মোস্তাফাসহ আরও অনেকে। ঘটনার দিন গাঁজা ব্যবসায়ীদের ধরতে যায় পুলিশ। কিন্তু কাউকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আয়েশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, মোতাহার স্যারের পা ধইরা কান্নাকাটি করছি। তারপরও আমার স্বামীরে থানায় নিয়া আটকায়া রাখছে। সূত্র জানায়, উত্তরা বিভাগের প্রায় সব থানাতেই আটক বাণিজ্য করছে পুলিশ। এর মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার এএসআই হাফিজ, এমদাদ, পূর্ব থানার এএসআই সফিক, আজমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মহিদুল (কথিত ডিআইজির আত্মীয়), উত্তরখান থানার এসআই আরিফ, দক্ষিণখান থানার এসআই জয়নাল অন্যতম।
আটক বাণিজ্যের অনুসন্ধানে ২০ জানুয়ারি রাত ১০টায় শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে দেখা যায় অভিনব চিত্র। ওসি জিজি (গণেশ গোপাল) বিশ্বাসের কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া থানার হাজতখানা। হাজতখানায় বন্দি নানা বয়সী অপরাধী। কিন্তু লোহার গ্রিলঘেরা হাজতখানার বারান্দায় কোট-টাই পরা এক ব্যক্তিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ারে। হাজতের সামনে বন্দিকে চেয়ারে বসিয়ে রাখার ঘটনা বিরল এবং অস্বাভাবিক। ঘটনার রহস্য জানতে থানার এক এসআইকে ফোন করেন এ প্রতিবেদক। ওই এসআই বলেন, ভাই ছবিটবি তুইলেন না। ওরে, ধইরা আনা হইছে। এখন সেটিং চলতাছে। মনে হয় রাতেই ছাইড়া দিব। হাজতখানার সামনে দায়িত্ব পালনরত কনস্টেবলকে অনুরোধ করে বন্দির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয় যুগান্তর প্রতিবেদক। বন্দি জানান, তার নাম শেখ জালাল উদ্দীন। একটি বেসরকারি শেয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কোনো অভিযোগ ছাড়াই আগারগাঁও এলাকা থেকে তাকে ধরে এনেছে পুলিশ। বন্দি অবস্থায় শেখ জালাল তার ছোট ভাই মামুনের মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, একটু আমার ভাইকে বলবেন আমাকে যেন তাড়াতাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করে। মোবাইল ফোনে মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ভাইকে ছাড়ানোর জন্য থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ নানা কথা বলে। বলছে গুরুতর অভিযোগ। ছাড়া যাবে না। পুলিশ কি টাকা পয়সা চেয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে মামুন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, আগে ভাইকে থানা থেকে ছাড়াইয়া আনি, তারপর সব বলব। পরদিন মামুন জানান, ভোরে তার ভাইকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। কিভাবে ছাড়ালেন জানতে চাইলে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। থানায় বন্দি অবস্থায় মুক্তির জন্য আকুতি জানানো সেই শেখ জালাল উদ্দীনও এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে রজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রেফতার বা আটক বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম ঢাকতে অসাধু পুলিশ সদস্যরা নানা অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন। নিজেকে আড়াল করতে অনেক পুলিশ সদস্য নেম ব্যাজ খুলে ডিউটি করছেন। অথচ আইন অনুযায়ী প্রত্যেক পুলিশের নেম ব্যাজ পরিধান বাধ্যতামূলক। এটি ইউনিফর্মেরই অংশ।
আটক বাণিজ্যসহ পুলিশের অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, শুধু ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এর বাইরে কোনো পুলিশ সদস্য যদি ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে আটক বাণিজ্য বা এ ধরনের কিছু করেন তবে তার দায় তাকেই নিতে হবে। পুলিশ বাহিনী এর কোনো দায় বহন করবে না। একই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎসঃ যুগান্তর

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন