২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৩৭তম দিনের পাশাপাশি দেশব্যাপী চলছে সর্বাত্মক হরতাল। সরকারের জুলুম নির্যাতন নিপাীড়নের মধ্যেও অবরোধে বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাজধানী। অচল হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। সিডিউল মতো চলছে না ট্রেন। চলছে রাজধানীসহ দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান। গতকাল বুধবার ২০ দলীয় জোটের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবরোধ ও হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ সারা দেশে মিছিল সমাবেশ করেছে ২০ দলের নেতাকর্মীরা।
২০ দলীয় জোটের ডাকে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচি পালন করতে না দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকার এক দিন আগে থেকেই সারা দেশে সড়ক ও নৌ পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সভা সমাবেশ বন্ধ করে। বেগম জিয়াকে তার ২ দিন আগে থেকেই তার গুলশানস্থ অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখে। ২০ দলীয় জোটের ডাকে টানা অবরোধের ৩৭তম দিন ছিল গতকাল। অবরোধের পাশাপাশি গত রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ৭২ ঘণ্টার হরতাল। গতকাল মঙ্গলবার এই হরতাল আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়িয়ে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। সিডিউল মতো চলছে না ট্রেন। রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ থেকে গতকাল বুধবার দশ বারোটি বাস চলাচল করলেও এতে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। সায়েদাবাদে হানিফ কাউন্টারের সুপারভাইজার সোহেল জানান, সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত কোন বাস সিলেট চট্টগামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। কাউন্টারের সামনে বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রী না থাকায় কোন বাস ছাড়তে পারেনি। মৌলভীবাজারগামী তাজ পরিবহনের সুপারভাইজার কালাম জানান, প্রায় এক ঘণ্টা হলো তাদের বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রী না থাকায় ছেড়ে যেতে পারেনি। একই অবস্থা সিলেটগামী মিতালী পরিবহনেরও। কমলাপুরে অবস্থিত ইউনিক বাসের কাউন্টারে সকাল সাড়ে দশটায় গিয়ে দেখা যায় বাস শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম জানান, রাতে তাদের কোন বাস ছেড়ে যায়নি। সকালে একটি বাস সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও এতে যাত্রীসংখ্যা ছিলো কম। এ এলাকার বেশীরভাগ দোকান পাট বন্ধ ছিল। আইনশৃংখলা বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।
বাণিজ্যিক এলাকা তথা দেশের একমাত্র ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত রাজধানীর মতিঝিল। হরতাল আর অবরোধের কারণে গতকাল বুধবার কোন ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল না এখানে। সব কয়টি ব্যাংকের কলাপসিবল গেইট দিয়ে সীমিত আকারে গ্রাহকরা প্রবেশ করেছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গ্রাহক কম থাকার কারণেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গল্প করে অলস সময় কাটিয়েছে। ফুটপাতের অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ। সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছিল একেবারেই সীমিত। এখানে যারা অফিস করেন তারা পায়ে হেঁটে অথবা রিকশায় চড়ে কর্মস্থলে এসেছেন। অধিকাংশ অফিসাররা কর্মস্থলে আসতে পাবলিক বাস ব্যবহার করেননি।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট। গতকাল অবরোধ ও হরতালের কারণে সদরঘাট এলাকায় বেশীরভাগ দোকান পাট ছিলো বন্ধ। সকাল ১১ টায় চাঁদপুরের উদ্দেশে যে লঞ্চটি ছেড়ে যাবার কথা ছিলো সেটি দুপুর বারোটায় ছেড়ে গেলেও যাত্রী সংখ্যা ছিলো একবারেই কম। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় নদী পারাপারের নৌকাগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। যাত্রী না থাকায় মাঝিরা অলস সময় পাড় করছেন।
গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সিদ্দিক বাজার, নবাবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বেশীরভাগ দোকান পাট ছিলো বন্ধ। এসব এলাকায় পুলিশী প্রহরায় লোকাল বাস চলাচল করলেও যাত্রী ছিলো কম। নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ীর পার্টস কিনতে আসা সুমন মিয়া জানালেন তিনি বাসে চড়া অনিরাপদ মনে করে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় এসেছেন। যাবেনও ট্রেনে। তিনি জানালেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিস্তানের বাসগুলো বর্তমানে চলাচল করছে না। হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলাচল করলেও নিরাপত্তার অভাবে যাত্রীরা এতে উঠতে চায় না।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন