চাকুরী হারালেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক এবং দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। ধারণা করা করা হচ্ছে তার সাম্প্রতিক ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারনে তাকে চাকুরী হারাতে হয়েছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে অব্যাহতি পত্রটি তাকে পৌছে দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মর্মে খবর বেরিয়েছে।
ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার কারনেই তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম কোন উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (মিডিয়া) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ’পীর হাবিবুর রহমানকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রোববার তাকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’ তবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে সম্প্রতি তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সরকার বিরোধী মন্তব্য করার কারণে তাকে অব্যহতি হয়েছে। পাঠকদের জন্য পীর হাবিবুর রহমানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
“বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, ডিস, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে সরকার ক্ষামতার আরেক দফা দাপট দেকালো। রাজনৈতিক চলমান সংকট নিরসনে এটা কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটি উদ্বেগের ব্যাপার। এই ধরণের ঘটনা সামরিক শাসনামলে মানায়। গণতন্ত্রের জমানায় বড্ড বেমানান।এটা সব্যতার পর্যায় পরে না। বেগম খালেদা জিয়াকে কি সরকার ওখানে আটক করে রেখেছে? একজন রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করলে রাজবন্দীর মর্যাদায় তাকে কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। বিষয়টা খটকা লাগছে। বিএনপি নেত্রীও দেশের অর্থনীতির ওপর এবং মানুষের নিরাপত্তার ওপর আঘাত হানা টানা অবরোধ-হরতালের যে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তা গণআন্দোলনে রূপ না নিয়ে নকশাল বাড়ির বা জাসদীয় গণবাহিনীর কিংবা সিরাজ সিকদারের পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির কিংবা পাকিস্তানি তালেবানি উগ্র হটকারী রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। সর্বনাশা পেট্রোল বোমার আঘাতে মানুষের জীবন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ইজতেমাও রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি শুক্রবারের মতো ছুটির দিনও। অবরোধের পাশাপাশি হরতাল যেন মড়ার ওপর খড়ার ঘাঁ। মানুষের সম্পৃক্ততা না থাক, নাশকতার ঘটনা বাড়ছে। জনজীবন অচল হচ্ছে। অর্থনীতি শেষ হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গেই পড়েনি, এসএসসি পরীক্ষার মতো বহুল প্রতীক্ষিত সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীই য়, অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অন্ধের মতো মানুষের সমালোচনার ভাষা না শুনছে সরকার না শুনছে বিএনপি। মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে। সর্বনাশা রাজনীতির হিংসা-প্রতিহিংসা চলছে। এটাকে কি মানুষের জন্য রাজনীতি বলে? এটাকে কি জনগণের রাজনীতি বলে? একে কি আসলে মানবকল্যাণের রাজনীতি বলে?েএ কোন অপরাজনীতি শুরু হয়েছে দেশে? রাজনৈতিক সংকট দুই পক্ষকেই উদার মনোভাব নিয়ে দেশ ও মানুষের স্বার্থে সমাধানের পথে যেতে হবে। না হয় উগ্রতা, হটকারীতা ও দাম্ভিকতার পরিণতি কখনো ভাল হয় না। জানি না আর কী সর্বনাশ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। মানুষের জীবনের চাইতে, সন্তানের শিক্ষার চেয়ে, দেশের অর্থনীতির চেয়ে সর্বপরি শান্তির চেয়ে ক্ষমতার রাজনীতি কখনো বড় হতে পারে না। মানুষের সভা-সমাবেশের অধিকার খর্ব করে সরকার কার্যত সংবিধান লঙ্ঘন করছে।”
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় নাম লেখান পীর হাবিবুর রহমান। ৯২ সালে বাংলাবাজার পত্রিকার নির্মাণ পর্ব থেকে মূলত তার পেশাদারিত্বের সূচনা ঘটে। তারপর দৈনিক যুগান্তরের নির্মাণ পর্ব থেকে ছিলেন দীর্ঘদিন। বিশেষ সংবাদাতা হিসেবে হয়েছিলেন আলোচিত রিপোর্টার। আমাদের সময় আমাদের অর্থনীতি হয়ে দীর্ঘদিন থেকে বাংলঅদেশ প্রতিদিনে উপ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।সর্বশেষ পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি।
উৎসঃ লন্ডন বাংলা নিউজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন