রমজান মাসের অপর নাম আত্মগঠনের মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একই সাথে দেহ ও মন গঠন করা হয়। সংযম ও নিয়ামানুবর্তিতার কঠোর অনুশীলন রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যাবতীয় কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রেখে যেমন ‘নফস’ দমন করা হয়, তেমনি অতিভোজ, অনিয়মিত ভোজ এবং জীবনযাত্রায় যাবতীয় অনিয়ম পরিহার করে সুস্থ দেহ গঠন করার তালিম নেয়ার মোক্ষম সুযোগ রয়েছে রমযান মাসে।
রমযানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। তন্মধ্যে পানাহারে সংযম অন্যতম। অনেকে ইচ্ছা করেই সেহেরিতে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি আহার করেন। তাঁদের ধারণা খাদ্য বেশি গ্রহন করলে দীর্ঘক্ষণ থাকবে, দেহে বাড়তি শক্তি যোগাবে, ক্লান্তি প্রতিরোধ করবে। এ ধারণা সঠিক নয়। একসাথে যত বেশি খাদ্য গ্রহণ করা হোক, ৩ থেকে সাড়ে ৩ঘণ্টার মধ্যে খাদ্য হজম হয়ে যায়। সুতরাং তা দীর্ঘক্ষণ হজম না হয়ে দেহের ভেতরে অক্ষুন্ন থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। মনে রাখা দরকার, শরীরের স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী আহার গ্রহন করতে হবে, অতিরিক্ত পানাহার সর্বদা ক্ষতিকর। এর ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে, মেদ জমতে পারে, কোলেস্ট্রল বেড়ে যেতে পারে। অতি ভোজনের কারণে পরিপাকতন্ত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়ে হজমশক্তি বাধাগ্রস্ত হলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যা পরবর্তীতে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সেহেরিতে অতিরিক্ত নয়, স্বাভাবিক নিয়মে পরিমিত খাবার গ্রহণ করাই শ্রেয়। অনেকে মনে করেন রমজযান মাসে দামি খাবার খাওয়া ভাল। রান্না ও ফ্রাই করা হরেক রকমের গোস্ত, মাছ, ডিম, তেলে ভাজা, ঘিয়ে ভাজা ইত্যাদি রমযানের প্রিয় খাবার। এভাবে করতে গিয়ে সেহেরি অনেক সময় খাদ্য বিলাসিতায় পরিণত হয়। মনে রাখতে হবে, সেহেরি উপলক্ষে পানাহার করা সুন্নত। খাদ্য বিলাসিতার সাথে সুন্নাতের সম্পর্ক নেই। যদি তা অপচয়ের পর্যায়ে পড়ে, সুন্নাত পালনের সওয়াবের পরিবর্তে উল্টা অপচয়কারি হিসেবে শাস্তি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে- অপচয়কারি শয়তানের ভাই। সেহেরির খাদ্য তালিকায় গোস্তের সাথে নিয়মিত মাছ, সব্জি, ডাল ইত্যাদি রাখা দরকার। সাথে কিছু ফলমূল হলে ভাল। দুধ ও দই আদর্শ খাবার। প্রশ্ন হতে পারে- রোযা উপলক্ষে সেহেরিতে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। একেবারে স্বাভাবিক নিয়মে একজন মানুষ এক বেলায় যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহন করেন সেহেরিতেও খাদ্যের পরিমাণ হবে তাই।
সেহেরির পর অনেকে লম্বা ঘুম দেন। এমনকি ঘুমানোর জন্য ফজর নামাজের জামা‘ত স্বাভাবিক সময়ের চাইতে কিছুটা এগিয়ে আনা হয়। সেহেরির পর দীর্ঘ ঘুম স্বাস্থ্যেসম্মত নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভরা পেটে ঘুম খাদ্য পরিপাকে বাধা সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক নিয়মে খাদ্য হজম না হলে পরিপাকতন্ত্রে নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়।
অনেকে মনে করেন সেহেরির পর লম্বা বিশ্রাম শরীরের জন্য ভাল। এধারণাও সঠিক নয়। বরং স্বাভাবিক নিয়মে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা শুরু করাই উত্তম। রমজানে বিশ্রাম নেয়ার উত্তম সময় হচ্ছে দিনের শেষ বেলা। রোজা রাখার পর বিকেলের দিকে ক্ষুধা লাগাটা স্বাভাবিক এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ সময় যতটা সম্ভব ভারি কাজ পরিহার করা ভাল। এ জন্য ইফতারি সামনে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া ও মুনাজাতের বিধান রাখা হয়েছে যাতে রোজাদাররগণ এ সময় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকেন।
রমযানে অনেককে বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগতে দেখা যায়। বিশেষ করে পায়খানার অনিয়ম, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা, বুক জ্বালা, ঢেকুর উঠা, দুর্গন্ধযুক্ত অধঃবায়ু নিঃসরণ ইত্যাদি। এর কারণ সেহেরির খাদ্য তালিকায় গুরুপাক খাদ্য বেশি রাখা, চর্বিযুক্ত, তেল-মসলাযুক্ত ভাজি-পুড়া ইত্যাদি মুখরোচক খাদ্য বেশি গ্রহন করা, সেহেরির পর লম্বা বিশ্রাম ও লম্বা ঘুম।
সেহেরিতে অতিভোজ পরিহার করুন, সেহরির পর লম্বা ঘুম ও লম্বা বিশ্রাম পরিহার করুন, স্বাভাবিক নিয়মে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করুন, সুস্থ থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন