নাগরিক সমাজের মূল লক্ষ্য সংকট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো। এই জন্য সংবিধান সংশোধন করানোর চেষ্টা করবেন তারা। সেটা করে তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু ক্ষমতা থাকলে প্রয়োজনীয় সময়ে তিনি সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবেন। আর সেটা করানোর জন্য নাগরিক সমাজের নেতারা এখন দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সেই সঙ্গে তারা বৈঠক করে এখন আবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় রূপরেখাও জনগণকে জানাতে চান। এই জন্য একটি রূপরেখাও প্রণয়ন করছেন। এর আগে তারা ২৬ ফেব্র“য়ারি একটি রূপরেখা তৈরি করতে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে সেটা হয়নি। নাগরিক সমাজের পেছনে থাকা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার টেলিফোনে কথপোকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন। প্রথম দফায় দশ দিনের রিমান্ড শেষে এখন আরো এক দফায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন। এই অবস্থায় তার গ্রেফতারের কারণে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে কিছুটা ভাটা পড়লেও আবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কাজেও গতি এনেছেন। এরই অংশ হিসাবে সোমবার রাতে তাদের কয়েকজন মহাখালীতে জাতীয় রূপরেখা করতে বৈঠকেও বসেছেন। সেখানে তারা কি করবেন সেটাও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই বৈঠকে নতুন একটি মাত্রা যোগ হয়েছে। ব্র্যাকের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, এতদিন তার নাম নানাভাবে অলোচনায় আসছিল। বিএনপি গত চার বছর ধরেই তাকে নিদর্লীয় সরকারের প্রধান করে নির্বাচন চাইছিলেন। কিন্তু তার নাম আগে ভাগে বলে দিলে আওয়ামী লীগ ও সরকার রাজি হবে না মনে করে কখনও সরকারের কাছে ওই ধরনের প্রস্তাব দেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি এখন প্রকাশ্যে আসলেন।
একটি সূত্র জানায়, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য ও একই ঘটনার যাতে বার বার পুনরাবৃত্তি না হয় জাতীয় নির্বাচনের আগে এই জন্য নাগরিক সমাজ র টেকসই সমাধান চায়। এই জন্য শিগগিরই তারা জাতীয় রুপরেখা ঘোষণা করবে। সেই জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তারা চাইছেন বিএনপি, আওয়ামী লীগ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হোক। তারা চান সর্বপক্ষীয় আলোচনার সূচনা। সেটা করে সবাইকে এককাতারে আনতে চান।
সেই জন্য তারা সোমবার আড়াই ঘন্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্র্যাক সেন্টার ইন এ যোগ দেন নাগরিক সমাজের আটজন সদস্য।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী, এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নাগরিক সমাজের তরফ থেকে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এর মাধ্যমে রুপরেখা দেশবাসির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, তারা মনে করছেন তাদের উদ্যোগে আলোচনার সূচনা করতে পারবেন। তারা নিজেরা মনে করছেন তাদের পক্ষে সংকটের সমাধান সম্ভব না। তা না হলেও যারা এই সংকট তৈরি করেছেন ও জিইয়ে রেখেছেন তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোই এর সমাধান করবে।
এ টি এম শামসূল হুদা এর আগে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আমরা চাই না বার বার নির্বাচনের আগে সংকটের সূচনা হোক। বরং এই ব্যাপারে একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। যাতে করে আগামীতে এনিয়ে কোন সমস্যা না হয়। সেই জন্য আমরা টেকসই সমাধান করার চেষ্টা করবো। একবার তাদের আলোচনা শুরু হলে এরপর ক্রমশ এগুবে।
নাগরিক সমাজের একজন সদস্য বলেছেন, আমরা চাই একটি টেকসই সমাধান আসুক। বারবার এদেশে সংকট তৈরি হয়েছে, আবার তার সমাধানও হয়েছে। ১৯৯৬, ২০০৭ সালেও সংকট তৈরি হয়েছিলো। মিটেও গিয়েছিলো। কিন্তু ২০১৪ সালে আবার এসেছে। এটা যেন আর না হয়, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা হয়েছে যে, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পক্ষে এ ধরনের সংকট সমাধানে কোনো ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তা না থাকলেও সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু ক্ষমতা যদি দেওয়া যায়, যাতে করে কোনো সংকট তৈরি হলে তা তিনি সমাধান করতে পারবেন।
এদিকে জানা গেছে, নাগরিক সমাজের সদস্যরা এর আগেও কয়েকবার বৈঠকে বসেছেন। সেটা তারা আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসেননি। কমিটি করার পর তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসছেন।
এদিকে এর আগে নাগরিক সমাজের তরফ থেকে এ টি এম শামসুল হুদা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দিলেও এর কোন জবাব পাননি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সাক্ষাৎ চাইলেও মিলেনি। তবে তারা আশা ছাড়তে চান না। আশা করছেন এখন না হলেও এক পর্যায়ে সাড়া মিলবে। তবে এবার তারা যে জাতীয় রূপরেখা ঘোষণা করবেন সেটা তারা প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে লিখিতভাবে দিবেন না। গণমাধ্যমের মাধ্যমেই তাদের কাছে বলবেন। তারা মনে করছেন গণমাধ্যমে তারা জেনেও যদি আলোচনা করেন সেটাই আমাদের লক্ষ্য। একটা আলোচনা তৈরিই আমাদের লক্ষ্য। নাগরিকের পক্ষ থেকেই নাগরিকদের মধ্যে তারা আলোচনারও সূচনা করতে চাইছেন।
এদিকে জানা গেছে, নাগরিক সমাজের নেতারা বৈঠক করলেও এই সব বৈঠকের সব খবর আগেই ভাগেই প্রকাশ হয়ে যাক সেটা তারা চাইছেন না। এই জন্য তারা এই বিষয়ে এখন কথাও বলতে চাইছেন না। বেশিরভাগই সদস্য তাদের মুঠো ফোন ধরছেন না। আবার যাও বা ধরছেন তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না কিংবা সিদ্ধান্ত জানেন না বলে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। একজন সাবেক উপদেষ্টা বৈঠকে উপস্থিত থাকার পরও বলেছেন তিনি বৈঠরে সিদ্ধান্ত জানেন না।
লন্ডন বাংলা নিউজ এর সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন