“২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনা দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর সেই ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাতৃভুমিকে রক্ষা করতে প্রাণপন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আজও যেন আমরা পরাধীন দেশে বসবাস করছি। গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ৭১ সালে যে বুকভরা আশা নিয়ে বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধ করেছিল এবং লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা আজ শকুনের নখে ক্ষতবিক্ষত। স্বাধীনতা দিবসের দিনে আমাদের বজ্র কঠিন শপথ হোক-স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে।
জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে তামাশার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা মানুষের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মাধ্যমে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে তারা ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়া কখনোই জনকল্যান নিশ্চিত করতে পারেনা এটাই স্বাভাবিক। নাগরিকের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণকারী এবং উৎপীড়ক ও লুটেরা আওয়ামী স্বৈরশাসনের কবল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০ দলীয় জোট যখন আন্দোলন সংগ্রামে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ঠিক তখনই মহাচক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন সংগ্রামের গতিধারাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর বিভক্ত দুই সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ডিঙ্গিয়ে যেদেশে কোন সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে সেদেশের নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ক্ষমতাবান হতে পারে তা বুঝতে মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করে বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহবান জানানো হলেও নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিতের কোন লক্ষণ এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।
সকল দল, নগরবাসী তথা দেশবাসীর নিকট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার মতো ইচ্ছা নির্বাচন কমিশনের থাকলে তড়িঘড়ি করে পুলিশ মহাপরিদর্শকের পরামর্শে এপ্রিল মাসেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফশীল ঘোষনা করা হতো না। নির্বাচন কমিশন ঠুটো জগন্নাথ বলেই আজ কোন প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি তোয়াক্কা করছে না। নির্বাচনী তফশীল ঘোষনার পূর্বে কোন নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবি বা সুশীল সমাজের সাথে পরামর্শ করা হয়নি। সরকারের নীল নক্শা অনুযায়ী তফশীল ঘোষনা করে ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন তথা সরকার। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে যে তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘোষনা করা হয়েছে তা গোটা দেশবাসীর ইচ্ছার সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সারাদেশে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ অগনিত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দী রাখা হয়েছে। তাদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অথচ আইনী বিধি-বিধান পরোয়ায় না এনে তাদেরকে জামিনও দেয়া হচ্ছে না। জামিন পাওয়া একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু সেই অধিকারটুকুও আজ ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তবে ২০ দলীয় জোট আশা করে-সরকার অবিলম্বে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবন্দসহ সকল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে এবং কারান্তরীণ নেতা-কর্মীদের মু্িক্ত দেবে।
প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার দেশকে সংঘাত ও হানাহানির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যথাযথ উদ্যোগ নিবে। আর তাতে নেতিবাচক মনোভাব দেখালে সরকারকে এরজন্য চরম মূল্য দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি আগামীতে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করতে ২০ দলীয় জোট দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। ২০ দলীয় জোট আশা করে সরকারের শুভচেতনা ও শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
বিএনপি’র অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণের পনের দিন অতিবাহিত হয়েছে অথচ এখনও পর্যন্ত তার সন্ধান দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ গতকাল বলেছেন-খুব শীগগিরই সালাহ উদ্দিন আহমেদ অপহরণ রহস্য উন্মোচিত হবে। ২০ দলীয় জোট মনে করে হানিফ সাহেবের বক্তব্যে বোঝা যায় যে, সালাহ উদ্দিন আহমেদ সরকারের গোচরেই আছেন। দেশবাসী সুস্থ অবস্থায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। যে মাসে দেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল সেই মাসে বিএনপিসহ বিরোধী সকল দলের গুমকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে হতাশাগ্রস্ত ও উৎকন্ঠিত পরিবারবর্গকে সরকার আশার আলো দেখাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে আজ সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে যে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে সেজন্য জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন