ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০১৫

আমার প্রিয় শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম

১৩ মার্চ ২০০৯,আজকের এই দিনে শাহাদাত বরণ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারী প্রিয় শরীফুজ্জামান নোমানীl আমার জীবন স্মৃতির অগ্রভাগ জুড়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনন্দ-বেদনার হাজারো ঘটনা। কিন্তু তা আজ শুধুই স্মৃতি। শহীদের সংস্পর্শের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আজ আমি গর্বিত, কারণ আল্লাহর এমন প্রিয় বান্দার খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। সেই স্মৃতির ফ্রেমে আবদ্ধ ঘটনা গুলোর বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু কথা, প্রতিটি মুহূর্তেই এখন স্মৃতি ।
নোমানীর ভাইয়ের সাথে প্রথম সাক্ষাতের কথা খুব করে মনে পড়ছে। দিন-ক্ষণ মনে নেই, এসএম হলের সামনে তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। হাস্যোজ্জ্বল, মায়াবী চেহারার সুঠাম দেহের অধিকারী নোমানীকে প্রথম দেখাতেই নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন মনে হয়েছে। জানলাম, তিনি কর্মী। বললেন, ‘কাম্পাসে এসে দাওয়াত পেয়েছি।’ আচরণে ও কথায় নম্র ও বিনয়ী নোমানীকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘দ্রুত সাথী হয়ে যান।’ এর কিছু দিন পরেই সাথী শপথ নিতে আসলেন তিনি। কন্টাক্ট করে বুঝলাম তার মেধার গভীরতা। শপথের পর তাকে দ্রুত সদস্য হতে বললাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল এই ভাইটি অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এতো অল্প সময়েই সদস্য হলেন তিনি। প্রথমে এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়। সবাই তার চাল-চলনে, আচার-আচরণে, মেধা ও যোগ্যতায় মুগ্ধ। তার সুন্দর বক্তব্য, অপূর্ব সুন্দর তেলাওয়াত তাকে সবার প্রিয় মানুষে পরিণত করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হলেন। এতো অল্প সময়ে এতদূর অগ্রসর হয়ে দায়িত্ব পালনের নজিরও করেছেন শহীদ নোমানী । আমি তাকে কোনদিন রাগান্বিত, বিরক্ত হতে দেখিনি। সদা নিশ্চুপ, কিন্তু ছিলেন অবিচল।
ঘটনার আগের দিন রাত থেকে শুরু করে শাহাদাতের কয়েক মিনিট পূর্ব পর্যন্ত অনেকবার কথা হয়েছে তার সাথে। কিন্তু তিনি ছিলেন ধীর স্থির, প্রতিটি সময়ে তিনি আমাদের সাহস যুগিয়েছেন। রাত থেকে হলে তল্লাসী, ফজর থেকে শুরু করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি; দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা জিম্মি করে নির্যাতন করার ঘটনা পিলখানার সেই ভয়াল জিম্মিদশা ও সেনা হত্যারই যেন আর এক অধ্যায়। এই পাশবিকতা শুধুমাত্র নরপশু হিংস্র হায়েনাদের পক্ষেই সম্ভব। 
দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা স্তব্ধ গোটা ক্যাম্পাস। সেদিন যেন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একযোগে লাশের খেলায় মত্ত। সব জায়গায় কথা বলে যখন নিরুপায়, তখন আমাদের করণীয় শেষ করলামÑ কখনো ফোনে, কখনো জায়নামাযে। পরিষদের ভাইয়েরা একসাথে বসে সবাই মিলে মহান রবের দরবারে হাত তুলে বললাম, ‘পরওয়ারদিগার! আমাদের যেখানে শেষ, তোমার সেখানে শুরু।’ চিৎকার করে তাঁর কাছে ফরিয়াদ করলাম, ‘আয় আল্লাহ, এই ভাইদের জীবন তোমার কাছেই সোপর্দ করলাম। তুমি আমাদের পরীক্ষা সহজ কর। প্রভু গো, শহীদের রক্তে কেনা এই জমিন থেকে আমাদের বিতাড়িত করো না!’ সেই কান্নার আওয়াজ এখনো কানে ভাসে। অতঃপর বিজয়ী হলাম ঠিকই তবে মূল্য দিতে হলো অনেক চড়া।

নোমানী ভাইয়ের কাছে যতবারই জানতে চেয়েছি কি খবর, তিনি বলেছেন কোন অসুবিধা নেই। এই তো ঠিক হয়ে যাচ্ছে। সেদিন গোটা ক্যাম্পাসে সবাইকে মুক্ত করতে নোমানী ভাইয়ের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সর্বশেষ তিনি যখন জানতে পারলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে আটকরত সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৯ জনকে হত্যা করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা, তখনি আল্লাহর পথের অকুতোভয় সৈনিক নিজের জীবনের বিনিময়ে ভাইদের উদ্ধার করেন। তখন পুলিশ ও র‌্যাব-এর সহায়তায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মীদের উপর হামলা করে। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রক্তলোলুপ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় আমাদের অনেক ভাই আহত হয়। উন্মাদের মত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নোমানী ভাইয়ের মাথায় ধারালো রামদা দিয়ে উপর্যুপরি কোপ দিলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা খুনের নেশায় এমনই উন্মত্ত হয়েছিল যে শহীদ নোমানীর মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরও তারা রামদা দিয়ে তার বাম হাতের আঙুল কেটে ফেলে এবং মাথায় কুপিয়ে আঘাত করে মাথার মগজ বের করে ফেলে। বয়ে যায় রক্তের স্রোতধারা।
যে মাথা ছিল মহাগ্রন্থ আল কুরআনের, তা তখন দ্বিখ-িত; যে কপাল আল্লাহকে সিজদা করতো, তা তখন রক্তাক্ত; যে হাতের ইশারায় মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকতেন, সে হাতের আঙুল তখন হাত থেকে বিচ্ছিন্ন। মুহূর্তে লাল হয়ে গেল মতিহারের সবুজ চত্বর। ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে যান কর্মচঞ্চল প্রিয় ভাই নোমানী। নিথর হয়ে যায় বলিষ্ট নেতৃত্বের সাহসী মানুষটির সুঠাম দেহ। বীরবেশে পান করেন শাহাদাতের অমিয় সুধা। আমাদের বুক ভাসিয়ে মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান প্রিয় ভাই শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কয়েক মিনিট পরেই খবর এলো গোটা ক্যাম্পাস শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শহীদ নোমানীর শাহাদাতের খবরে ততক্ষণে তার পিতা ও মাতা বাকরুদ্ধ। সন্তানহারা পিতার নির্বাক জিজ্ঞাসা আর বৃদ্ধা মায়ের করুণ রোনাজারির প্রশ্নের কি জবাব দেবেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠকে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে নোমানীকে হত্যার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াবেন কিভাবে?
আমরা আমাদের প্রিয় সাথী নোমানী কে ফিরে পাবো না। আমরা এভাবে অ-সংখ্য ভাইকে হারিয়েছি। কিন্তু এর শেষ কোথায়? আর কত মায়ের বুক খালি হবে? আর কত ভাই-বোনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হবে? আর কত দিন হত্যা, সন্ত্রাস, লুণ্ঠন চালিয়ে যাবে ছাত্রলীগের মানুষরূপী নরপশুরা। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন আদর্শিক দ্বন্দ্বের সাহসী সৈনিক নোমানী ও রমজান বিশ্বাস আর নির্মাণে ছিলেন অকুতোভয়। দীপ্ত পথচলা আর আল্লাহভীতি ঘিরেই তাদের জীবন। আজ তারা আল্লাহর মেহমান, তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু আমরা জানি, শহীদ নোমানী শাহাদাত এ আন্দোলনকে পিছিয়ে দেয়নি বরং এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর। এ সীমানা পরিমাপ আমাদের সাধ্যের বাইরে। আর আমাদের দায়িত্বের পরিধিও বেড়ে গেল অনেক দূর। সে সীমানাও অজানা। যারা শহীদ নোমানী কে ভালোবাসেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শোককে শক্তিতে পরিণত করে এ কাফেলাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। এতেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শহীদ নোমানী ভাইয়ের মা আজ বাকরুদ্ধ। তিনি বলেনÑ ‘আহ্! আমার এতো আদরের বাবাকে তারা কিভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো? আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে বলতাম, তোমরা আমাকে কোপ দাও কিন্তু আমার কলিজার টুকরো নোমানীকে আঘাত করো না।’ শহীদের বাবা জনাব হাবিবুল্লাহ নিজেই সন্তানের জানাযা পড়ান। তিনি জানাযার পূর্বে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তো তোমার কাছে চেয়েছিলাম আমার ছেলে আমার জানাযা পড়াবে, কিন্তু আমি আজ ছেলের জানাযা পড়াচ্ছি। আর পিঠে বহন করছি তার কফিন। মাবুদ গো, তুমি শুধু আমার ছেলেকে শহীদ হিসেবে কবুল করো। কি অপরাধ ছিল আমার সন্তানের? আমি তোমার কাছেই এই হত্যার বিচার চাই।’ ছোট ভাতিজা-ভাতিজী কিছুই বুঝেনা, তারা বাকরুদ্ধ। ছোট দুই শিশুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত¡নার ভাষা আর খুঁজে পেলাম না। তাদেরকে আদর করার প্রিয় চাচ্চু আর নেই। ‘কেন মারা হল তাদের প্রিয় চাচ্চুকে?’ এই হল তাদের জিজ্ঞাসা।
প্রিয় ভাইদের হারিয়ে আজ আমরা শোকাহত। তার বৃদ্ধ বাবা-মা আর পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে হারানোর বেদনায় জ্বলতে থাকবে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত। মহান রবের দরবারে সন্তান হারা মায়ের আহাজারি আর প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে চোখের পানি কি কোনই কাজে আসবেনা? আসবে, অবশ্যই আসবে। একদিন তারা পাবেন এই রোনাজারির পুরস্কার। আল্লাহর সম্মানিত অতিথি হবেন শহীদের পিতা মাতা হিসেবে। সেদিন জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে উড়তে থাকবেন শহীদেরা। এটাই তো শহীদের চূড়ান্ত সফলতা! ন্যায় ও বাতিলের এই দ্বন্দ্ব কোন সাময়িক বিষয় নয়, এটি চিরস্থায়ী আদর্শিক দ্বন্দ্বেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। শাহাদাত ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবের সিঁড়ি, কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর, উজ্জীবনী শক্তি, নতুন করে পথচলার সাহস। আর খুনীরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত, ভীত ও সন্ত্রস্ত। তবে ওরা থেমে থাকেনা। চালিয়ে যায় একের পর এক মানুষ হত্যা। কেননা, ওদের সত্ত কলুষিত। তবে আমাদের বিশ্বাস এই দুনিয়ার আদালতে এর নায্য বিচার না হলেও আল্লাহর আদালত থেকে খুনিরা রেহাই পাবে না।
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, কোন দৃষ্টিই আল্লাহর দর্শন লাভ করতে সক্ষম নয়। কোন নবীও আল্লাহকে দেখতে পাননি কিন্তু শহীদরা মৃত্যুর পরপরই আল্লহর দর্শন লাভ করেন। ওহুদ যুদ্ধে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম শাহাদাত লাভ করেন যুদ্ধের পর রাসূল করীম (সা) শহীদদের পুত্র প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহকে সান্ত¡না দিতে গিয়ে বলেন,Ñ ‘হে জাবির, আমি কি তোমাকে তোমার পিতার সঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাতের সুসংবাদ দেব না: জাবির বললেন অবশ্যই দিন হে আল্লাহর রাসূল, তখন তিনি বলেন: আল্লাহ কখনো অন্তরালবিহীন মুখোমুখি কথা বলেন নি। তিনি বলেন: হে আমার গোলাম তোমার যা খুশি আমার নিকট চাও। আমি তোমায় দান করবো। তিনি জবাবে বলেছেন, ‘হে আমার মনিব। আমাকে জীবিত করে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন আবার আপনার পথে শহীদ হয়ে আসি।’ তখন আল্লাহ তাকে বলেন, ‘আমার এ ফয়সালা তো পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি যে, মৃত লোকেরা ফিরে যাবে না।’ তখন তোমার পিতা আরজ করেন, ‘আমার মনিব তবে অন্তত আমাকে যে সম্মান ও মর্যদা আপনি দান করেছেন, তার সুসংবাদ পৃথিবীবাসীদের জানিয়ে দিন।’ তখন আল্লাহ নিন্মোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন: “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত।” (জামে আত-তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ) 
শাহাদাতের রক্ত জমিনকে করে উর্বর। আন্দোলনকে এগিয়ে দেয় অনেকদুর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে ঐসব লোকদের সঙ্গী হবে যাদের নিয়ামত দান করা হয়েছে, তারা হলো-নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সালেহ, আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম।” আল্লাহর পথে লড়াই করা কর্তব্য সেই সব লোকেরই যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে দেয়, আল্লাহর পথে যে লড়াই করে ও নিহত হয়, কিংবা বিজয়ী হয়, তাকে আমরা অবশ্যই বিরাট ফল দান করব। ইহলৌকিক এ জীবন থেকে শহীদরা বিদায় নিয়েও পৃথিবীতে তারা অমরত্ব লাভ করেন। আর পরজগতে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবিত করে নিজের পর পরজগতে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবিত করে নিজের মেহমান হিসেবে জান্নাতে থাকতে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না, প্রকৃত পক্ষে তারা জীবন্ত, কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমরা অনুভব করতে পারো না” (আল-বাকারা: ১৫৪)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, ‘তাদের প্রাণ সবুজ পাখির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে তাদের আবাস, ভ্রমণ করে বেড়ায় তারা গোটা জান্নাত, অত:পর ফিরে আসে আবার নিজ নিজ আবাসে।” (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) প্রিয় রাসুল (সা) বলেছেন: ‘‘শাহাদাত লাভকারী ব্যক্তি নিহত হবার কষ্ট অনুভব করে না। তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে, কেবল ততটুকুই অনুভব করে মাত্র।’ (তিরমিযী)
রসূলে খোদা (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিয়ামতের দিন সেই আঘাত নিয়েই সে উঠবে আর তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতই, কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের মত। (বুখারী ও মুসলিম: আবু হোরায়রা (রা) অন্য হাদীসে উল্লেখ করেছেন নবী পাক (সা) বলেন, ‘‘কসম সেই সত্তার মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতের মুঠোয়, কেউ আল্লহর পথে কোনো আঘাত পেলে কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়ে হাজির হবে। আর সে আঘাতের অবস্থা হবে ঠিক মিশকের মতো” (বুখারী ও মুসিলম)। এটা শহীদদের কত বড় সৌভাগ্য শহীদ বৃদ্ধ মা এখনো রাত জেগে তার সন্তানের চোখের পানি ফেলেন।
শাহাদাত মুমিন জীবনের বাসনা। বাতিলের ধ্বজাধারীরা হয়তো শহীদ রমজান ও নোমানীকে হত্যা করে আন্দোলন পিছিয়ে দিতে চায় কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে হত্যা, জেল-যুলুম চালিয়ে কোন আদর্শিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যায় না। শহীদ নোমানী ও রমজানের মত সন্তানদের হারিয়ে তার পরিবারকে কষ্টের পাহাড় বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। সংগঠন তাদের নেতৃত্বের শূন্যতা অনুভব করবে অনেকদিন। কিন্তু তাদের রক্তের যোজনায় জন্ম নিবে আল্লাহর দ্বীনের অকুতোভয় অগনিত সৈনিক।
তাই আল্লাহ তায়ালা যদি কারো সন্তানকে শাহাদাতের মর্যদা প্রদান করেন তবে তারা শহীদদের পিতামাতা হবার গৌরব অর্জন করেন। তাদের জন্য এর চেয়েও খুশির বিষয় হলো তারা তাদের শহীদ সন্তানের সুপারিশ লাভের আশা পোষণ করতে পারেন, একজন শহীদ যেমন তার বংশে, পরিবারে এক শাশ্বত ঐতিহ্য সৃষ্টি করে যান তেমনি আবার তার অনুসারীদের ছাড়াও তার আপন বংশের লোকদেরকে চিরদিন জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত করে থাকেন। সুতরাং মুমিনদের দৃষ্টিতে শহীদ পরিবার অত্যন্ত সম্মানীয় এক আদর্শ পরিবার। শহীদের পিতা-মাতা মুমিনদের নিকট শ্রদ্ধাস্পদ, শহীদের সন্তান, স্ত্রী, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনকে সকল মুমিন নিজেদেরই আত্মীয়-স্বজন মনে করে। এসব দিক থেকেই শহীদ পরিবার গৌরবান্বিত। মহান আল্লহ শহীদদের জন্যে অসংখ্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। তাদের জন্যে নির্ধারিত ক্ষমা, মর্যাদা ও বিরাট পুরস্কারের কথা শুনে কার না ঈর্ষা হবে?
আমার প্রিয় রাসূল (সা) বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট শহীদদের জন্যে ছয়টি পুরস্কার রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে: ক) প্রথম রক্ত বিন্দু ঝরতেই তাকে মাফ করে দেয়া হয় এবং জান্নাতে যে তার আবাসস্থল তা চাক্ষুস দেখানো হয়। খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রেহাই দেয়া হয়। গ) সে ভয়ানক আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকে। ঘ) তাকে সম্মানের টুপি পরিয়ে দেয়া হবে, যার এক একটি ‘ইয়াকুত’ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকেও উত্তম। ঙ) তাকে উপঢৌকন স্বরূপ আনত: নয়না হুর প্রদান করা হবে এবং চ) তাকে সত্তর জন আত্মীয় স্বজনের জন্যে সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হবে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মেকদাম ইবনে মাদ’দীকরব)।
শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী মাত্র একমাস পর মাস্টার্স পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে মা-বাবার কাছে হয়ত ফিরে যেতেন, আজ তিনি শুধুই স্মৃতি। কি বলে সান্ত¡না দেবো তার আব্বা আম্মাকে? সদা হাস্যোজ্জ্বল নোমানী শুধু মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণে কত না ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এমনকি দেশের কল্যাণেও বহু ভূমিকা রেখেছেন। তার মাঝে ছিল বাংলাদেশকে গড়ার তীব্র আকাক্সক্ষা, ছিল দীপ্ত শপথ। তিনি ছিলেন শিল্পী ও লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্নেহভাজন ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীর প্রিয় বন্ধু। সেদিন যখন আমেরিকা, লন্ডন, মক্কা শরীফসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে সবাই খোঁজখবর নিচ্ছে, শহীদদের জন্য সর্বত্র দো’আ চলছে, তখন মনে হচ্ছিল যে, আমাদের শহীদেরা কতো বেশি ধন্য ও মর্যাদাবান! আমরা হয়তো হারিয়ে যাবো কিন্তু তারা অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী আজ একটি ইতিহাস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন