বহু দিন ধরেই লক্ষ করছি, বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষা থেকে ইসলামি ঐতিহ্যমণ্ডিত কিছু শব্দ পরিবর্তন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এ অপচেষ্টার নায়ক কিছু সেকুলার ও বাম লেখক, যারা ইসলামের ঐতিহ্যকে সহ্য করতে পারেন না। ইসলাম ও এর ঐতিহ্যের বিরোধিতা তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। বামদের পজিটিভ করার মতো এখন আর কিছু নেই। বাংলাদেশে তাদের কাজ ইসলামবিরোধিতা এবং ইসলামি শক্তিকে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক বলে বদনাম করা। অথচ ইসলাম সবার অধিকারেই বিশ্বাস করে। মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। ফিতনা বা সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করাকে ইসলাম অবৈধ মনে করে। এ দেশের মূল ইসলামি শক্তি, তা বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দল হোক, ‘হেফাজতে ইসলাম’ হোক বা কওমি মাদরাসা হোক; তারা সন্ত্রাসে বা কথিত জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না।
কিছু দিগভ্রান্ত ব্যক্তির কাজ, যারা হয়তো কোনো বিদেশী গোয়েন্দা চক্রের এজেন্ট, তাদের চরমপন্থী কাজকে ইসলাম বা মূল ইসলামি শক্তির ওপর চাপানো যায় না।
এখন আসল আলোচনায় আসি। যেমন ‘লাশ’ শব্দ। হাজার বছর ধরে এ শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এর উৎস ফারসি ভাষা, যা কয়েক শ’ বছর ভারতের রাজভাষা ছিল। যেমন ভারতে ইংরেজ শাসনের কারণে বহু ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে, তেমনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অনেক আরবি-ফারসি শব্দও বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে এবং গৃহীত হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যায় যে, বাংলা ভাষার উন্নয়ন হয়েছে মুসলিম সুলতানদের হাতে। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অপচেষ্টা না হলে বাংলা ভাষার রূপ ভিন্ন হতো এবং তাতে সংস্কৃতের পরিবর্তে আরবি-ফারসির প্রভাব বেশি থাকত।
যা হোক, এখন ‘লাশ’ শব্দটি বদলে ফেলা হচ্ছে। বেশির ভাগ পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে আমরা দেখছি ‘মরদেহ’। ‘মরদেহ’ শুনতেও খারাপ লাগে। এর চেয়ে ‘মৃতদেহ’ অনেক ভালো। লাশ শব্দ তো আরো সুন্দর। সরকারের কর্তৃপক্ষ এবং বাইরের নিরপেক্ষ চিন্তাবিদদের অনুরোধ জানাই, যেন এ প্রবণতা রোধ করা হয়।
আরেকটি শব্দ ‘মরহুম’ (পুরুষের জন্য) ও ‘মরহুমা’ (নারীর জন্য)। এর অর্থÑ যার ওপর রহম বা দয়া করা হয়েছে। এটি মৃতব্যক্তির জন্য একটি দোয়াও। কিন্তু বর্তমানে এর পরিবর্তে ‘প্রয়াত’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রকম একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত ও ইসলামি ভাবধারার শব্দের পরিবর্তন কিভাবে মানা যায়! যদি অমুসলিম ভাইবোনদের অপছন্দ হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ‘মৃত’ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘মরহুম’ অব্যাহত থাকা উচিত।
একটি ইংরেজি শব্দ ‘ভাইস চ্যান্সেলর’। এটিকে পরিবর্তন করে ‘উপাচার্য’ করা হয়েছে। উপাচার্য শব্দটি আচার্য, তথা পূজা পরিচালনার সাথে যুক্ত। সুতরাং তা বেশির ভাগ বাংলাভাষীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে’ও এটিকে ভাইস চ্যান্সেলর রাখা হয়েছে। বহু ইংরেজি শব্দের মতো এটিকেও বাংলা ভাষায় গ্রহণ করে নেয়া যায় এবং লেখা যায়।
আমরা আশা করি, কিছু বাম ও সেকুলারের চেষ্টা ব্যর্থ হবে। একটি লক্ষণীয় বিষয়, মুসলিম বিশ্বে যেসব রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সেকুলার ছিল, যেমন- ইরান, তুরস্ক ও তিউনিসিয়া; সেসব রাষ্ট্র ইসলামের দিকে ফিরে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা যায়।
আমি সব চিন্তাশীল নিরপেক্ষমনা ব্যক্তিকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন