গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে অপহরণের পর খোঁজ মিলছে না বগুড়ার ব্যবসায়ী শিহাবউজ্জামান পাভেলের (২৬)। গত ৯ই জানুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগর থেকে তাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এ মামলার কোন অগ্রগতি জানাতে পারেনি পুলিশ। অপহৃতের পরিবারের অভিযোগ, পাভেলের মামলা নিয়ে পুলিশের আচরণ রহস্যজনক। পাভেলের ছোট বোন জেনি জামান সিক্তা জানান, পাভেল কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি গার্মেন্টের ব্যবসা করতেন। গত ৯ই জানুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৪-৫ জন লোক তার ভাইকে
উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ১৩ই জানুয়ারি নিজে বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১৮। মামলার এজাহারে বলা হয়, রুকসানা আলী হীরা, মো. বাবর আলী ও বেলি বেগম নামে তিনজনের সঙ্গে ব্যবসার বকেয়া টাকা নিয়ে পাভেলের কথা কাটাকাটি হয়। টাকা পরিশোধের কথা বলে তারা ৭ই জানুয়ারি পাভেল ও তার সৎ ভাই জাকির হোসেন মুক্তাকে বগুড়া থেকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে আসে। সেই রাতে পাভেল ও তার ভাই হোটেলে অবস্থান করেন। ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত তারা পাওনা টাকা ফেরত পাননি। শুধু মোবাইল ফোনে ওই তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। একই দিন বিকাল ৪টায়ক পাভেল ও মুক্তা বাড়ি থেকে বিকাশের মাধ্যমে আসা টাকা তুলতে বিজয়নগরে যান। মাহতাব সেন্টারের সামনে তারা প্রাইভেট কার পার্ক করেন। মুক্তা একটি দোকানে টাকা তুলতে ঢোকেন। এ সময় পাভেল গাড়ির ভেতরে বসা অবস্থায় ছিলেন। গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটের কিছু সময় পর সিলভার কালারের হায়েস মাইক্রোবাসযোগে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪-৫ অজ্ঞাতনামা লোক পাভেলের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে দুজন পাভেলের শার্টের কলার ধরে প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তোলার চেষ্টা করে। ড্রাইভার ও আশপাশের লোকজন দৌড়ে এলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলে, পাভেলের নামে মামলা আছে। ঘটনার পর থেকে পাভেলের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ড্রাইভার পাভেলের পরিবারকে বিষয়টি জানালে পল্টন থানায় ও ডিবি অফিসে খোঁজ করা হয়। কিন্তু এসব জায়গায় তার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপর ১৩ই জানুয়ারি পল্টন থানায় মামলা করেন পাভেলের বোন সিক্তা। মামলাটি তদন্তের জন্য পল্টন থানা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। একই দিন র্যাবের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন সিক্তা। গতকাল সিক্তা মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাইকে ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। এ মামলায় দুজনকে আটক করে রিমান্ডে নিয়েছিল ডিবি পুলিশ। সে সময় পুলিশের ব্যবহার ভাল ছিল। আসামিদের একদিন রিমান্ডে রাখার পর পুলিশের আচরণ রহস্যজনকভাবে বদলে যায়। মামলার তদন্তকাজে পুলিশ আগ্রহ কমিয়ে দেয়। মামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের কথা বললে ডিবি অপরাগতা প্রকাশ করে বলে তারা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখন কোন অভিযান চালাতে পারবেন না। তারা পরে যোগাযোগ করতে বলেন। অপহরণের সঙ্গে তাদের পরিবারের একজন সদস্য জড়িত আছে বলে জানান সিক্তা। এ ছাড়া মামলার আসামিদের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী একজন প্রতিমন্ত্রী জড়িত আছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই উজ্জ্বলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার জুয়েল রানা বলেন, মামলার উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।
সূত্র : মানবজমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন