যেই ভারতের “মওকা মওকা” বিজ্ঞাপন দেখলে রাগে আমাদের গায়ের পশম দাড়িয়ে যায়, আমাদের অজান্তে আমরাই কি তাদের সেই বিজ্ঞাপনের পুঁজি যোগাচ্ছি না? ভারতের বাটপারি শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকলে এটাকে নিছক ক্রিকেটপ্রেম অথবা দেশপ্রেম বলে মাফ করা যেতো। কিন্তু তাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন দেখলে মনে হয় যে আমাদের দেশটা তারা একরকম কিনে নিয়েছে। তারা বাঘের মত নির্ভীক বাঙালি জাতিকে বিড়াল বলে গালি দেয়, আমাদের দেশের বেশীরভাগ ব্যবসাতে তাদের একনিষ্ঠ পোদ্দারি এবং চুরি-চামারি দেখার মত হলেও ফাপর মারার বেলায় তাদের গলা সবার চেয়ে উঁচু। শুধুমাত্র গ্যাস সেক্টরে তাদের চুরি দেখলে মনে হয় আমাদের অনুমতি নিয়েই তারা বঙ্গপোসাগর দখল করে সেখান থেকে আমাদের নিয়ম করে দুই বেলা কয়েক বালতি পানি দেয়। আপনার বাসায় চুলার গ্যাস থাকে না, সিএনজি পাম্পে গ্যাসের প্রেসার থাকে না। পৃথিবীর সর্বাধিক প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎস বাংলাদেশ। তাহলে আমরাই কেন বঞ্চিত?
বললে শুনতে খারাপ শোনা যায়, আমাদের নিজেদের উদাসীনতা থেকেই এই চোর সাহস যুগিয়েছে। আমরা হচ্ছি এক বলদ, মূর্খ কোটিপতির ন্যায় যার নিজের অফুরন্ত সম্পদ থাকার পর ও পাশের বাড়ির চোরের উপদ্রবে নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ভোগ করতে পারছি না। কিভাবে এই চোর এত সাহস যোগাল?
আমরা যখন কোটিপতি হওয়া সত্তেও খাছলতের দরুন চোরের বাসার ভাঙ্গা কুলা ধাঁর করতে যাই, তখন এই বেহায়া চোর নির্লজ্জের মত ভাঙ্গা কুলা ফেরত চাইতেএসে বস্তাভরা চাল চুরি করে নিয়ে যায়। এই হচ্ছে তাঁর সাহসের মূল উৎস।
এবার বাস্তবতায় ফিরে আসি। তার আগে আরেকটা গল্প জানা দরকার। গল্প বললে ভুল হবে, কারন এটা একটা রুঢ় বাস্তবতা। মুঘল সম্রাট আকবর যাকে আমরা “আকবর দ্যা গ্রেট” নামে চিনি, যে অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখেছিল সে ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করে কিছু হিন্দু পরামর্শদাতাদের অমূল্য পরামর্শের বদৌলতে দীন-ই-ইলাহি নামে এক মনগড়া ধর্মের সুচনা করেছিল। সেই ধর্মের একটি রীতিনীতি এবং ইসলাম ধর্ম অবমাননার একটি মাধ্যমস্বরূপ সে পবিত্র হিজরি সন বাদ দিয়ে মনগড়া ফসলী সন প্রবর্তন করে। আকবরের পর মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কয়েকবছর এই ফসলী সন চালু রাখেন, পরে তিনি তওবা করে আবার হিজরি সন চালু করেন।
কিছু হিন্দু ইসলামবিদ্বেষের প্রমাণস্বরূপ ওই ফসলী সনের গননা চালু রাখে। ব্রিটিশরা ভারত দখল করার পর হিন্দুরা ব্রিটিশদের পা চাঁটার সময় ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব দেখিয়ে সমমনা সাজার জন্য এই ফসলী সন পুনরায় চালু করে। ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ থেকে উৎখাত হয়ে দেশে ফিরে যাবার সময় তাদের হিন্দু গোলামগুলিকে ইসলামবিদ্বেষী দিক-নির্দেশনা দিয়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই ফসলী সন চালু রাখার ব্যাপারটি যাতে মুসলমানরা পুরোপুরিভাবে তাদের ধর্মে অটল থাকতে না পারে।
হাজার বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্য, বাঙ্গালির গর্ব পহেলা বৈশাখ আসলে প্রথমত ইসলামবিদ্বেষ এবং দ্বিতীয়ত ষড়যন্ত্রের ফসল। পহেলা বৈশাখ পালন করার মাধ্যমে আমরা আকবরের অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বপ্ন এবং ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়নের পরিচায়করুপে কাজ করছি।
কেন ভারতের ছ্যাঁচড়া, চোর-বাটপার জনগন আমাদের অপমান করবে না, কেন আমাদের সম্পদ চুরি করে আমাদের উপর বড় গলায় কথা বলবে না? আমরা তো আসলেই ওদের সংস্কৃতি, ওদের ভাঙ্গা কুলার মুখাপেক্ষী।
দাদাদের কোলে বসাইয়া দুই বেলা মিষ্টিমুখ করাইয়া যাওয়ার সময় একটা পাঁচশ টাকার নোট হাতে গুঁজে দিলেও আমাদের এত অপমান হবেনা যতটা হচ্ছে তাদের অখণ্ড ভারতের চেতনার অংশ পহেলা বৈশাখ ইলিশ মাছ এবং পান্তা খেয়ে পালন করে। জনগনের সাথে সরকারের ও উচিৎ এই নোংরা দিবস পালন করা থেকে বিরত থাকা এবং ফসলী সন এর গননা বন্ধ করে দেয়া।
ওহ, দাদাদের আরেকটা কীর্তি তো বলতে ভুলেই গেছি। আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা যেই পান্তা-ইলিশ খেয়ে নেচে গেঁয়ে পহেলা বৈশাখ পালন করেন, যেই পদ্মার ইলিশ বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের উর্বরতা এবং সচ্ছলতার প্রতীক, আমাদের প্রানপ্রিয় চোর-বাটপার দাদারা আমাদের ইলিশ রপ্তানির প্যাটেন্ট নিজেদের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। সেইদিন আর দূরে নয়, যেইদিন দাদারা আমাদের সম্পর্কে বলবে যে এই বিড়ালের জাতি ইলিশ চুরি করে অখণ্ড ভারতের অংশ হওয়ার মওকার আশায় প্রতিবছর নির্লজ্জের মত পহেলা বৈশাখ পালন করে।
(লেখক: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ করছেন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন