ইয়েস ম্যাডাম জিয়া আপনাকেই বলছি, কারণ আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বলেই কোন ফায়দা আপাতত নাই। আর এ বিষয়টি আপনিও জানেন যেমন তেমনি জানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত লাখো দেশপ্রেমিক। যে যাই বলুক আপনিই এখনো জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যের প্রতীক। তাইতো এখনো কোটি কোটি নাগরিক অপেক্ষায় চেয়ে আছে মুক্তির প্রত্যাশায়। কিন্তু সেই নব্বইয়ের ম্যাডাম জিয়া আপনি আর আজকের আপনি ঠিক থাকলেও ঠিক নেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও পরিবেশ। সেদিন লাখো জনতা আপনার ডাকে নামলেও আজকে বেইমানি করতে একটুও পিছপা হচ্ছে না আপনার নিজের দলের নেতারাই। সে কারণেই কঠিন সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রাখায় ক্রমাগত ধংস হচ্ছে আন্দোলনের প্রাণশক্তি। আর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে রাক্ষস তাড়াতে পারবেন না; জাতিও তা আশা করে না।
জি ম্যাডাম, আপনাকেই বলছি, হয়ত কেউই আপনাকে কিছু বলে না। বলতে সাহসী যেমন হয় না তেমনি আরেক দল আপনাকে কিছু বলতেও চায় না। কিন্তু কেন চায় না? একবারও কি ভেবে দেখেছেন কেন আপনার নিজ দলের নেতারা এইভাবে গা ঢাকা দিলো? কেন শত হাজার নাগরিক ও দলীয় কর্মী নিহত ও গুম হওয়ার পরেও বিক্ষুব্ধ জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে না ভারতীয় দালাল অবৈধ হাসিনা গং সরকারের উপর। কিভাবে আপনার ও জোটের যে কোন সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা সরকার আগে ভাগেই জেনে যায় ? কেন সারা দেশে তোলপাড় করা আন্দোলনে অবৈধ সরকার দিশেহারা হয়ে পড়লেও ঢাকায় কোন আন্দোলনই গড়ে তোলা সম্ভবপর হচ্ছে না ?
ইয়েস ম্যাডাম জিয়া এ বিষয়গুলো ভেবে দেখার সময় এখনই। আপনাকে হয়তো অনেকেই বলবে এখন এই সংগ্রাম চলাকালে দলের বেইমানদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে আন্দোলনের ক্ষতি হতে পারে। কথাটা কি আদৌ ঠিক ? বেইমান গং কি এখনো দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে না? নাগরিকদের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে কাজ করছে না? যদি করেই থাকে তবে আর তাদের এ ছাড় দেয়া কেন ?এ ছাড় দেয়ার কারণেই আজকে ওই সকল বেইমানদের উপর রাগ করেই তাদের পরবর্তী স্তরের নেতারা কেউই চূড়ান্তভাবে আন্দোলনকে সফল করার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে না। তৃনমূল তৃনমূল করে চিত্কার করলেও এর ফল পাওয়া যাবে না, যদিনা তৃনমূলের নেতৃত্ব বাস্তবিক অর্থেই প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন।
ইয়েস ম্যাডাম জিয়া, শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি জনগনের ভালবাসাই এখনো আপনার দলের প্রতি রয়েছে বলেই আপনি একা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতি নাগরিকদের কোনরূপ ক্ষোভ নেই। তারাও দেখতে চায় আপনি নিজ দলের বেইমানদের প্রতি, নিজদলের ভারতীয় এজেন্টদের প্রতি কঠোর হয়ে এখনি তাদের বহিস্কার করে দিন। আর সেই শূন্যস্থানগুলো ত্যাগী নেতাদের দ্বারা পূরণ করে দিন দেখবেন আন্দোলনের গতি ১০০ ভাগ বেড়ে গেছে। দায়িত্ব পাওয়া নেতারাই মোকাবেলা করবে হারিয়ে যাওয়া নেতাদের তাতে তারা যত ক্ষমতাধর আর শক্তিমানই হোক না কেন। তখন আর আপনাকে সংলাপের নামে ধরনা দিতে হবে না কোন বৈদেশিক শক্তির কাছে। সবাই ধরনা দেবে আপনার কাছে, যেমন আন্দোলন বন্ধ করতে এখনো ধরনা দেয় সেই সকল মহল, যে মহলগুলোর অতিরিক্ত টাকা পয়সা কামাইয়ে টান পরেছে।
ইয়েস ম্যাডাম দলের যে সকল পুরনো ত্যাগী নেতা কর্মী দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সম্ভব হলে তাদের দলে ফিরিয়ে আনুন, এরা জানপ্রাণ দিয়ে দলের জন্য যেমন কাজ করবে তেমনি তাদের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা প্রমানে তারা যা করবে তাতে আন্দোলন এগিয়ে যাবে শতগুণ। তবে পুরনো দিনের দলের ও সরকারের পলিসিতে যে সকল সমস্যা ছিল তার আত্মসমালোচনা করা খুবই জরুরি। হয়ত এ দুসময়ে আত্মসমালোচনা করা সম্ভবপর হবে না, তবুও কাউকে না কাউকে এগুলো লিপিবদ্ধ করতে দেয়া অসম্ভব কোন কাজ নয়। সেই সাথে আগামী দিনে দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী সরকার গঠিত হলে কোন কোন পলিসি বাস্তবায়ন করবেন তার কোন রূপরেখা জনগণ এখনো পায়নি। ব্যক্তির প্রচারণার কোন প্রয়োজন আছে বলে অন্তত আমি মনে করি না। নাগরিক হিসেবে আমার এই মনে করা না করার মূল্য দিতে পারলে সকল নাগরিকদের মূল্যও আপনারা দিতে পারবেন বলে নাগরিকদের কাছে প্রতিয়মান হবে। তাই যেকোন ভাবেই হোক নাগরিকদের সামনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ড্রাগ ডিলারদের বিরুদ্ধে, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং হত্যাকারী পুলিশ ও র্যাবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন সেই সাথে কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন মাত্র এই কয়েকটি ঘোষণা দিতে পারলেই জনগণ উদ্বেলিত হবে। এগুলো বিশেষভাবে প্রয়োজন।
ইয়েস ম্যাডাম জিয়া, শহীদ জিয়ার হাতে গড়া সেনাবাহিনী আজকে জাতির এই দু:সময়ে এগিয়ে আসছে না জাতিকে উদ্ধার করতে, একবার কি ভেবে দেখেছেন কেন? ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনী যদি এগিয়ে না আসতো তবে হয়ত আজকের বিএনপিই সৃষ্টি হতো না, নেতৃত্বতো নয়ই। কিন্তু আপনার নেতৃত্বধীন সরকার ও দল সেই সেনা অফিসারদের বিচারিক্ভাবে হত্যা করার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নিলো না। আপনার দলের ভেতরের ভারতীয় দালালেরা দলকে বিভ্রান্ত করলো। বিএনপিকে দাড় করিয়ে দিল জিয়ার হাতে গড়া সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী আজকে আর কোন রিস্ক নিতে চায় না। কারণ তাদের বিপদে কেউই এগিয়ে আসেনি, এগিয়ে আসেনি বিএনপির বা জামায়াতের মত কোন বেনিফিসিয়ারী শক্তি। এ বিষয়গুলো সম্ভব হলে এই সংগ্রামের ভেতরেই পরিস্কার করা উচিত।
ম্যাডাম সবশেষে বলছি বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী আর বাঙালি জনগোষ্ঠী আজ আলাদা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কৃষ্টি কালচারের যে বারোটা আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট ভারতীয় নীলনকশায় বাজিয়ে রেখেছে তা থেকে ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি দিতে না পারলে একদিন বিএনপির অস্তিত্ব সংকট হবে। কয়েক যুগ উদাসীন থেকে আপনার সরকার ও দল সে বিষয়টি আরো আগেই নিশ্চিত করে গেছে। এর পরেও বলব সময় রয়েছে ঘুরে দাড়ানোর। শুধু মাত্র নিজ জনগোষ্ঠী ও সমর্থিত শক্তিগুলোকে আস্থায় নিতে হবে আস্থাবান করতে হবে, নিজেদের পলিসিগত সততাও খোলাসা করতে হবে।
কবির ভাষায় ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে।” কিন্তু আমি সহজ করেই কথাগুলো বলে গেলাম কোন লোভের আশায় নয়; একজন আর্য সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসন বিরোধী দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে। আর আমার মতো এইভাবে বলার নাগরিকেরাই সেদিন শহীদ জিয়াউর রহমানের পাশে জমায়েত হয়েছিলেন। যে নাগরিকদের সমর্থন এখনো রয়েছে, কিন্তু তাদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হলে শুধুমাত্র একটি নির্বাচন আর সরকার গঠনেই সমস্যার সমাধান হবে না।
Source: Facebook
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন