ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ফারাবীসহ ১০ জন বিভিন্ন সময় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছেলেন। তাদের প্রত্যেককে পেশাদারি প্রক্রিয়া বজায় রেখেই গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে এফবিআই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা (এফবিআই প্রতিনিধি দল) আমাদের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদের আরও সহায়তা করবেন। প্রয়োজনে তারা আরও কয়েকদিন বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।’
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তকাজে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই টিম এসেছে। তারা আমাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। আমরা কী তদন্ত করছি, কী চিন্তা করছি, এগুলো নিয়ে কথা বলেছে।’
তিনি জানান, তারা ঘটনাস্থলের বর্ণনা শুনেছেন, তারা নিজেরাও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। অভিজিতের বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। আলামত সংগ্রহকারী সিআইডি ও ডিবির ক্রাইম সিনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, এফবিআই তদন্তে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্তকাজ যেভাবে চলছে, যে পদ্ধতিতে আমরা এগোচ্ছি, তাতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রয়োজনবোধে আরও কিছুদিন থেকে সব ধরনের সহয়তা করবে। ইতোমধ্যে আমরা এফবিআইয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছি।
শাফিউর রহমান ফারাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু এ্যাসোসিয়েটের (সহযোগী) নাম পাওয়া গেছে। ফারাবী অভিজিৎকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে তারাও এ্যাগ্রেসিভ ও আপত্তিকর কমেন্ট করেছে। তাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে।
তিনি জানান, ফারাবী জিজ্ঞাসাবাদে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস ও উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ঘটনাস্থলে থেকে এবং যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
এফবিআই ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কথা বলেনি। তারা সরাসরি কথা বলতে পারবে না। তবে আমাদের মাধ্যমে প্রয়োজনে কথা বলবে।
কারা হত্যা করেছে ডিবি এখনো সেটা নিশ্চিত হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছি। এটা উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কাজ।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি সংগঠন হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তবে আমরা মনে করছি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি (হত্যাকাণ্ড) করতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ আবার আইএসকেও সমর্থন করে। এদের মধ্যেই কেউ না কেউ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এফবিআইয়ের সঙ্গে অভিযানে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামী শনাক্তের পর আসামীকে আমরাই গ্রেফতার করব। আসামী বিপজ্জনক হলে আমাদের বিশেষ টিমের সহায়তা নেওয়া হবে। এফবিআইয়ের সরাসরি অপারেশনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা যদি কোনো আসামী শনাক্ত করে থাকে তাহলে আমরা তাকে গ্রেফতারের নিশ্চয়তা দেব।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলার ঘটনায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর জখম হন।
খুনের ঘটনায় অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামীর নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি।
গত বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সহায়তার জন্য ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌঁছে। উৎসঃ লন্ডন বাংলা নিউজ
্
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন