দেশে বেশ ক'বছর ধরে ইসলামী সংগঠন গুলোর নেতা কর্মীদেরকে নানা অজুহাতে গ্রেপ্তার করে মিডিয়ার সামনে (বোমা সাদৃশ ও কিছু বই সাজিয়ে রেখে) হাজির করে বলা হয় বোমা ও জিহাদী বই পাওয়া গিয়েছে।
দেশের অধিকাংশ মানুষ এমন নাটক বিশ্বাস করে না। কারণ গ্রেপ্তারের পর প্রশাসন অনেক সময় কি ধরনের নাটক সাজায় তা কারো অজানা নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্বার্থসিদ্ধ করার জন্য বোমা/অস্ত্র নাটক সাজানো অথবা প্রকৃত পক্ষে বোমা/অস্ত্র পেলেও অবস্থা ভেদে কর্তাব্যক্তিদের অঙ্গুলি নির্দেশে অস্বীকার করার নজির স্থাপনে দলীয় প্রশাসনের জুরি নেই। বিষয়টি যেন ঠিক এমন "ঘটনা সত্য সাক্ষী দূর্বল"।
ইদানিং "জিহাদী বই উদ্ধার" প্রচারণা অত্যন্ত পরিচিত হয়ে উঠছে। যেমন অমুক জায়গা থেকে জিহাদী বইসহ জামায়াত-শিবির ৫ নেতা-কর্মী আটক! বুঝলাম হয়তবা বিরোধীমত দমনের জন্য স্বৈরাচারী নীতি অবলম্বন করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করল, বোমা নাটক সাজাল! কিন্তু জিহাদী বইসহ গ্রেপ্তার প্রচারণার উদ্দেশ্য কি? আর কোন বই জিহাদী কোন বই জিহাদী নয় সরকারের পক্ষ থেকে এর তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি। তাহলে দেশে কি জিহাদী বই নিষিদ্ধ? এ ধরণের প্রচারণার উদ্দেশ্য কি?
মুসলিম জীবনে জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলমানদের হৃদয়ে জিহাদ এক চেতনার নাম, যা তাকে অভিষ্ট লক্ষে নিয়ে যায়। যা নফসের গোলামী ও কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। জিহাদ মানে দ্বীন কায়েমের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আল্লাহ দ্রোহিতার বিরুদ্ধে মু'মিনের আওয়াজকে বুলন্দ করা। প্রত্যেক মুসলমানের উপর ইসলামী নিশানাকে উড্ডীন করার জন্য আল্লাহর হুকুম পালনের নিমিত্তে চেষ্টা সাধনা বা জিহাদ করা ফরজ। মুসলমান মাত্রই তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
জিহাদী বই কি? বা কোন কোন বইকে জিহাদী বই বলে? মূলতঃ প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজেদের বাসা/বাড়ীতে কুরআন, হাদীস ও ইসলামের বিভিন্ন দিক বিভাগ নিয়ে লিখিত বই জানার প্রয়াসে রেখে থাকেন।-
এমন প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য হলো সবার ভিতর জিহাদ সম্পর্কে ভীতি ছড়ানো। কেউ যেন কুরআন হাদীস, ইসলামী সাহিত্যে ও ইসলাম সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে বাসা-বাড়ীতে সংগ্রহে না রাখে। যার ফলে সময়ের ব্যবধানে এসব বই পুস্তক ছাপানো, লেখা ও ক্রয় করা সমূলে বন্ধ হয়ে যাবে এবং জিহাদ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিবে। এর মাধ্যমে জিহাদ মানে নাশকতা, জঙ্গিপনা বলে সবার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর যারা জিহাদী বা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে কাজ করবে তাদেরকে মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহিৃত করা হবে। এর বিরুদ্ধে বিরুপ ধারণা তৈরির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ধর্মকে অকেজো হিসেবে উপস্থাপন করা এবং এর প্রতি মানুষের ঘৃণা ছড়ানো। এবং এর মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের নামে ধর্মহীনতাকে ছড়িয়ে দেয়া।
এমন গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়া জরুরী। যদি আমরা সোচ্চার না হই হয়ত বা একসময় দাড়ি-টুপি রাখা, নামাজ পড়া, কুরআন রাখা, কুরআন পড়া, মাদ্রাসা-মসজিদ চালু রাখা নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন আফসোস করেও কোন লাভ হবেনা। মনে রাখতে হবে শেষ বিচারদিনে মহান আল্লাহ কি আমাদের এই দায়িত্বপালনে অবহেলার জন্য ক্ষমা করবেন?
লেখক: Abdul Zabbar , কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন