25 Nov, 2015 সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, আমাদের দোষেই আমরা বিদেশী গণমাধ্যমে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছি। আরেকটা জিনিস খুব অপ্রিয়। সভ্য সমাজের সদস্য হিসেবে আমি যেটা মনে করি, ফাঁসির (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ) পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। মিষ্টি বিতরণের ফলে আমরা সারা বিশ্বের কাছে কী মেসেজ দিচ্ছি?
আমরা মেসেজ দিচ্ছি এটা প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের ব্যাপার। সারা দুনিয়ায় আমরা আমাদের নিজেদের অজান্তেই একটা খারাপ ধারণা সৃষ্টি করছি। গতকাল চ্যানেল আইএ মতিউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচারটা (’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ) যেভাবে হচ্ছে তাতে বিচারের সুনামটা ক্ষুণœ হচ্ছে। গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, বাংলাদেশে দুই বিরোধী নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তারা এটা বলছে, কারণ আমরা যেভাবে কথাবার্তা বলছি, যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত আলোচনাগুলো যেভাবে করছি, এখানে আমাদের প্রতিহিংসাটা ফুটে উঠছে। এখানে শাস্তি দেয়ার প্রবণতাটা ফুটে উঠছে।
এজন্য তারা (আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম) এসব শুনে-দেখে বলছে যে, হ্যাঁ সরকার তার বিরোধী দলের লোককে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে। মতিউর রহমান চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে ড. মালিক বলেন, সরকারের লোকজন না জানার কারণে নিজেরাই পানি ঘোলা করছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের সাজা মওকুফ বা দ- কমানোর ক্ষমতা আছে। দ- কমানোর জন্য দরখাস্ত যে কেউ করতে পারে। কারো যদি ১৪ বছরের জেল হয় তাহলে সে ৩ বছর খাটার পরে দরখাস্ত করতে পারে। যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের পরেও দরখাস্ত করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ১০ বছর সাজা খাটার পরে বাকি ১০ বছর মাফ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এর সাথে দোষ স্বীকার না করার কোনো প্রশ্ন জড়িত নয়। এখন যদি বলা হয়, তারা দরখাস্ত করেছে মানে দোষ স্বীকার করেছে, তাহলে যারা দরখাস্ত করেনি অথচ ফাঁসি হয়ে গেছে তারা কি নির্দোষ? এটা খুব একটা উদ্ভট অবস্থান সবাই নিচ্ছে। সংবিধানে বলা আছে, কাউকে নিজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। এটা কখনো বলা যাবে না যে, তুমি দোষ স্বীকার না করলে তুমি এটা (দরখাস্ত) করতে পারবে না।
আমার মনে হয়, এটা সংবিধান পরিপন্থী। তিনি বলেন, স্পষ্টতই তারা একটা দরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট বরাবর। দরখাস্ত করা মানে তারা তাদের সাজা কমানো বা সাজা মওকুফের একটা আবেদন করেছেন। এর সাথে দোষ স্বীকারের কোনো প্রশ্ন জড়িত আছে বলে আমার মনে হয় না। সরকার এটাকে দোষ স্বীকার করার কথা বলে অহেতুক পানি ঘোলা করছে। এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমার মনে হয়, সরকারের যেসব লোকজন এসব কথা বলছেন বা মত দিচ্ছেন তারা পুরো জিনিসটা না বুঝেই বলছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলছেন, যে ৪৯ ধারা। সাধারণ ব্যক্তিরা এটা না জানতে পারে, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জানা উচিত আমরা বলি আইনের ধারা। কিন্তু সংবিধানের বিষয়টাকে বলি অনুচ্ছেদ। সংবিধান ভিন্ন; এজন্য আমরা বলি দ-বিধির ৫০০ ধারা, ১৩২ ধারা ইত্যাদি। কিন্তু সংবিধানের ক্ষেত্রে আমরা বলি ৭ অনুচ্ছেদ, ৪৬ অনুচ্ছেদ ইত্যাদি। এই জায়গাগুলো মনে হচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফলে তারা জিনিসটাকে খুব ঘোলাটে করে ফেলছেন। ফলে জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়ছে। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সমালোচনা, আইএসসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। উৎসঃ ইনকিলাব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন