গত একটি সংখ্যায় লিখেছিলাম জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, যার জন্মই হয়েছে অন্যায়, অসত্য, অগণতান্ত্রিক, সহিংসতা, সন্ত্রাস ওজঙ্গীবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানবতার কল্যাণধর্মী কাজের মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক তৎপরতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, উদারতা, বদান্যতা ও ভারসাম্যপূর্ণ তৎপরতার মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক সমর্থন আদায় করে একটি জনকল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই জামায়াতের লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী তার নীতি-পদ্ধতি ও আদর্শের অনুসরণের ব্যাপারে অটল ও অবিচল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ডিগবাজি খাওয়ার কোন উদাহরণ নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও এব্যাপারে ভিন্নমতের সুযোগ নিয়ে মানবতার মহান বন্ধু ও কল্যাণকামী জামায়াত নেতৃত্বকে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও এদেশের কিছু বিপথগামী মানুষ কর্তৃক যেসব হত্যা, ধর্ষণ এবং অন্যায় জুলুম-নিষ্পেষন সংঘটিত হয়েছে, তার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব আসল অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে এসব অপরাধ থেকে যোজন-যোজন দূরে অবস্থানকারী নিষ্কলুষ চরিত্রের জামায়াত নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে তাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে মিডিয়ার দলকানা একটি মতলববাজ অংশকে দিয়ে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট তৈরি করে নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি, হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী বিভেদের যে বীজ বপনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় নির্বাচন ও নিকট অতীতে জামায়াতের ডাকা হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যাপক সমর্থন প্রদান করে জনগণ তাদের মনের অভিব্যক্তি ও গণরায় সরকারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
এরপরও জামায়াতে ইসলামী ও তাঁর নেতৃত্বের ব্যাপারে যেসব বিভ্রান্তিকর, অসত্য, অসম্মানজনক ও উস্কানিমূলক সংবাদ ও খবর মিডিয়ার চিহ্নিত ওই একটি অংশ পরিবেশন করে চলেছে তার প্রকৃত উৎস কি? তাহলে তাদের এসব বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের উৎস কি তাদের উদ্ভট মস্তিষ্কের হলুদ সাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু? মিডিয়ার এই অংশের ব্যক্তিরা যদি খোলা মন নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে একটু পেছনে কিংবা বর্তমানেও নিরপেক্ষ মন নিয়ে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন সন্ত্রাস, সহিংসতা, উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ এবং জ্বালাও-পোড়াও এর কর্মকান্ড বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী গোষ্ঠীর আজন্ম চরিত্র। এই আওয়ামী লীগই জঙ্গীবাদের মদদদাতা। তাদের নেতা মীর্জা আযমের আপন দুলাভাই শায়খ রহমান। এই শায়েখ রহমান ও বাংলা ভাইদের কার্যক্রম আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে পরিচালিত হতো বলে অনেকে মনে করে থাকেন। তার কিছু দালিলিক প্রমাণও সেই সময়ের পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য মিডিয়ায় পরিবেশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়। সে সময়ে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে শায়খ রহমান বাংলা ভাইদের বিভিন্ন আস্তানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল তার বেশির ভাগ আস্তানা ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে। যেগুলো ভাড়া নিয়ে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইদের অনুসারীরা বোমা তৈরি ও অস্ত্রের মজুদখানা হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ হলো অস্ত্র ও জঙ্গি তৈরির ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং সাপ্লাই সেন্টার। তারাই হরতালের নামে চলন্ত যাত্রীবাহী গাড়িতে গানপাউডার নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী। তাদের নেতা-নেত্রীরা কতটা উগ্র তা তাদের বক্তব্য প্রদানের সময় উগ্রতার তেজ দেখে বুঝা যায়। তাদেরই এক নেত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশের এক সদস্যের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছিলেন। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশের এক সদস্যকে বিবস্ত্র করে জনসম্মুখে তাকে টেনে-হেঁচড়ে ঠাট্টা মশকরায় মেতে ওঠেছিল। তারাই স্বাধীনতা উত্তর প্রথম সরকার গঠন করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারকে হত্যার পরে দম্ভোক্তি করে বলেছিল, কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? তারাই শুধু মতের ভিন্নতা ও দেশের স্বার্থের পক্ষ অবলম্বনের অপরাধে হাজার-হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল দেশের স্বার্থের পক্ষে ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে সেক্টর কমান্ডারের ভূমিকা পালন করার পরও তাকেই হতে হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী। তারা রক্ষী বাহিনী গঠন করে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতার ওপর অকথ্য নির্যাতন পরিচালনা করেছিল। এই রক্ষীবাহিনীর সহযোগিতায় যখন তখন যে কাউকে ধরে নিয়ে খুন, মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন, মানুষের জায়গা-জমি দখল, যে দখল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তিও রক্ষা পায়নি। স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, ব্যাংক লুটপাট ও সীমাহীন দুর্নীতির মহোৎসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে দিয়েছিল। যার ফলে তৎকালীন সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের বেতন দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের লুটপাটের ফলেই ৭৪’ এ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যে দুর্ভিক্ষে সৃষ্টির সেরা মানুষ আর কুকুরের মধ্যে ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায়। বাসন্তিরা জাল পরে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা চালিয়েছিল। দেশের এই করুণ অবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংগঠন, এনজিও সংস্থাগুলো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু আওয়ামী লুটেরারা লুটের নেশায় এতোই বেপরোয়া হয়েছিল যে, বিদেশ থেকে পাওয়া ত্রাণের টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করতেও লজ্জাবোধ করেনি। তাইতো তাদের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান আপসোস করে বলেছিলেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার ডানে চোর, বামে চোর, সামনে চোর পিছনেও চোর’। তিনি আরো বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির জন্য সাড়ে সাত কোটি কম্বল এনেছিলাম, আপসোস! আমার কম্বলটিও সংরক্ষণ করতে পারিনি। সেজন্য এদলটিকে কম্বল চোরের দল হিসেবেও এক সময় ব্যাপক জনশ্রুতি ছিল।
গুম, খুন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি আর লুটতরাজের সে পুরনো অভ্যাস থেকে আওয়ামী লীগ কখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। ৯৬-২০০১ সালে তাদের নেতা-কর্মীরা শেয়ার মার্কেট লুট ও দুর্র্নীতির মহোৎসব চালিয়েছিল। তাদের সে সময়ের শাসনামলে ডা.এইচ.বি ইকবালের নির্দেশে প্রকাশ্যে দিবালোকে পিস্তল ঠেকিয়ে মালিবাগে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা ও আহত করেছিল। তাদেরই দলের সন্ত্রাসের গডফাদার নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, লক্ষ্মীপুরের তাহেরসহ আরো অনেকের কুকীর্তির ফিরিস্তি সে সময়ের মিডিয়া ও জনগণের মুখে-মুখে ছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আঁতাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তাদের পূর্বের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে দলীয় সহযোগি সংগঠনগুলোকে দিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে জিম্মি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, অপহরণ, গুম, খুন মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন, জনজীবনে ব্যাপক আতঙ্কের পাশাপাশি গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি লুটতরাজ, শোষণ ও বঞ্চনার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার মানসে তাদেরই প্ররোচণা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। জনশ্রুতি আছে, বিদ্রোহীদের একটি অংশ ও খুনিদেরকে নির্বিঘেœ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে ক্ষমতাসীনদেরই একটি অংশ।
সীমান্তে ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটা তারে ঝুলিয়ে রাখলেও তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা শেয়ার বাজার লুটপাট করে ৭০ লাখ মানুষের পকেট কেটে নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করে মারাও গিয়েছেন। প্রতারণা, ঘুষ-বাণিজ্য আর মন্ত্রীদের সহযোগিতায় সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকে জনগণের আমানতের হাজার-হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দলীয় কর্মীদের পকেটকে সরগরম করেছে। আর তাদেরই একজন সিনিয়র মিনিস্টার হাসতে হাসতে বলেছেন ৪-৫ হাজার কোটি টাকা এটি কোন বড় ব্যাপার নয়। কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও জনগণের পকেট খালি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য দেশের বাইরে দ্বিতীয় নিবাস বানাবার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের গত আমলে কোন প্রকল্প শুরুর আগেই প্রথম দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। সেজন্য বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু শুরুর আগেই দুর্নীতির অভিযোগে তাদের ফান্ড প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও তাদের সহযোগিদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তার সরকার ও মন্ত্রীদেরকে হাসির খোরাকে পরিণত করেছেন। তারাই ২৮ অক্টোবর ২০০৬ইং-এ জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ জনসভায় হামলা করে জনসভায় আগত নিরীহ জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে। শুধু এখানেই শেষ নয়, প্রকাশ্যে দিবালোকে সাপ মারার মতো লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে-পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। তারা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও লাশের ওপর উন্মত্ত নৃত্য প্রদর্শন করে যা মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে। তারাই নাটোরের বড়াই গ্রামে ও ফেনীতে প্রকাশ্যে দিবালোকে জনপ্রতিনিধিদেরকে রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করে। তারাই এবং তাদেরই মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি অংশ নারায়ণগঞ্জে জনপ্রতিনিধি কমিশনার নজরুল ইসলামসহ সাত নাগরিককে হত্যা করে লাশ নদীতে চুবিয়ে রাখে। ইসরাঈলী বাহিনী গাজায় যেভাবে নৃশংসতা চালিয়ে গণহত্যা, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেয়াসহ মানবাধিকারকে পদদলিত করেছিল একই কায়দায় সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী অভিযানের নামে যে তান্ডব চালিয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রে ইসরাঈলী বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তারাই তো রাষ্ট্্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ইচ্ছামতো আইন রচনা করে মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষী ঠিক করে বিশ্ববিখ্যাত আলেমেদ্বীন ও দেশপ্রেমিক দুর্নীতিমুক্ত জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করছে ও তাদের অশুভ চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জনতা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়লে সরকারের নির্দেশে ও তাদের দলীয় গুন্ডাদের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই শতাধিক দেশপ্রেমিক নাগরিক শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। তাদের বর্বরতা থেকে নারী ও শিশুরাও রেহাই পাননি। সুতরাং তাদের এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সহিংসতা, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা না বলে জামায়াত-শিবিরের নিয়মতান্ত্রিক, সুশৃঙ্খল ও গঠনমূলক কার্যক্রমকে কোন যুক্তিতে সহিংসতা ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়? ১০.১১.২০১৪ সোমবার অনলাইন নিউজে খবর এসেছে যুবলীগের একটি সমাবেশে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতির প্রতিবাদে বলেছেন, “তোমাদের ওই মানবাধিকার আটলান্টিকের ওপারে রাখ, ইউরোপের মধ্যে রাখ” তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে আওয়ামীলীগ কতটা কোন ধরনের চিন্তা-চেতনা পোষণ করে ও তাদের কাছে মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি কতটা গুরুত্বহীন। তারপরও কিছু দলকানা মিডিয়ার বন্ধুরা এখনো আওয়ামীলীগকে সহিংস, জঙ্গী ইত্যাদি না বলে অন্যায়ভাবে জামায়াতের ওপর এই বদনাম চাপাবেন? সুতরাং সময় এসেছে চিন্তা-ভাবনা করার ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। এ চিন্তা ও সিদ্ধান্তে ভুল করলে শুধু যে জামায়াত শিবিরের ক্ষতি হবে তা নয় বরং জাতি হিসেবে আমরা আরো দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বো। সামাজিক অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে। বিঘিœত হবে শান্তি ও শৃঙ্খলা। ফলে এর জন্য ক্ষতি হবে গোটা জাতির। বড় খেসারত দিতে হবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বশংবদ মিডিয়ার একটি অংশ দিয়ে এসব বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ জামায়াত ও তার নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে প্রচার করে আসছে। কিন্তু জনগণ এসবে বিশ্বাস করেনি। তার প্রমাণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছাড়াই জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী সরকার সবকিছু তার একক নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা করে। তারা ধারণা করেছিল এ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতে তথা ২০দল অংশ নেবেনা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় স্থানীয় নির্বাচনের সকল পদ দখল করে তৃণমূল পর্যন্ত লুটপাট চালাতে পারবে। কিন্তু ২০ দল তথা বিএনপি-জামায়াত ইলেকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তাতেই প্রমাদ গুনল ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য বিশেষ করে জামায়াত যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে ধর পাকড় শুরু করে। তারপরও জামায়াত নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলো। অনেক জায়গায়ই প্রার্থী নিজে গিয়ে নমিনেশন দাখিল করতে পারেননি। ভোট চাইতে জনগণের কাছে যেতে পারেননি। এজেন্টদেরকে ভোটের আগেই মামলা-হামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ভোট সেন্টার থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। আগের রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী ক্যাডাররা সীল মেরে বাক্স ভরে ফেলে। সারাদিন একেকজন এক হাজার দু’হাজার পর্যন্ত ভোট প্রদান করে। আবার গণনার সময় জামায়াতের এজেন্টদের বের করে দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইট অফ করে রেজাল্ট পাল্টে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে। এতো কিছুর পরও জামায়াত ৩০২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে। এই ৩০২ টিতে প্রদত্ত ভোটে আওয়ামীলীগ পেয়েছে শত কারচুপির পরও ৩৬% জামায়াতে ইসলামী শত বাধার পরও ৩৫% আর বিএনপি পায় ৩২%।
সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায় পরিষ্কার হয়েছে। জনগণ আওয়ামীলীগের তথাকথিত মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে, সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে পরিচালিত প্রহসনের বিচারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরও আওয়ামীলীগ সঠিক উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা একটি ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে আবারও খুনের নেশায় মেতে উঠেছে এবং এখনো জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে পুরনো পথেই হাঁটছে। জনগণ জামায়াতের ডাকে ১০৮ ঘন্টা স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালন করে আওয়ামীলীগের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আবারও গণরায় দিয়েছে। সুতরাং শাসকগোষ্ঠী এ গণরায়কে সম্মান প্রদর্শন ও জনগণের ভাষাকে যথার্থ উপলব্ধি করে নিজেদের চিন্তাধারাকে শুধরে নিয়ে সঠিক পথে যাত্রা শুরু করতে পারেন। আর তা না করে যদি জামায়াতে ইসলামী ও তাঁর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রাখেন তাহলে জনগণ অচিরেই আপনাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় লালকার্ড প্রদর্শন করবে ইনশাল্লাহ।
লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও
কেন্দ্রিয় কর্মপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন