তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : দেশের তৈরি পোশাকের প্রায় অর্ধেক বাজার হাতছাড়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, চিলি, পোল্যান্ড ও মেক্সিকোর বাজার হারাতে বসেছে দেশ। বাকি অর্ধেক বাজারেও পিছিয়ে পড়ছে প্রধান এই শিল্প খাতটি। গার্মেন্ট খাতের সক্ষমতা কমে যাওয়াই এর মূল কারণ, এমন মত খাত-সংশ্লিষ্টদের। এভাবে চললে কয়েক লাখ শ্রমিক চাকরি হারাবে বলে সতর্ক করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমাদের গার্মেন্ট খাতের সক্ষমতা কমে এসেছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা খাপ-খাওয়াতে পারছি না। এ জন্য আমাদের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
“আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে সামনের দিনে রপ্তানি আরও পড়ে যাবে। কর্মসংস্থান কমে যাবে। চাকরি হারাবেন অনেক শ্রমিক।” বলেন গার্মেন্ট খাতের সংগঠন বিজিএমইএ’র এই সাবেক সভাপতি।
তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঝুকেছে ভিয়েতনাম ও ভারতের দিকে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৬ শতাংশ তৈরি পোশাক কম নিয়েছে দেশটি। অথচ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। এক-পঞ্চমাংশ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি হয় এই দেশটিতে।
বাংলাদেশ থেকে যখন পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, তখন ভিয়েতনাম থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ আর ভারত থেকে ৮ শতাংশ আমদানি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাসনস ট্রাজেডির অজুহাতে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (জিএসপি) তুলে নেয় দেশটি। যদিও গার্মেন্ট পণ্য আগে থেকেই দেশটিতে জিএসপি সুবিধা পেত না। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকে। এখন তা নেতিবাচক ধারায় পৌঁছেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, আমেরিকা চায় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং তার জন্য সংলাপ। সেটা নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা জিএসপি সুবিধাকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। তাদের কথা-বার্তাতেও তা স্পষ্ট হয়েছে। একই অবস্থা ইউরোপের বাজারেও। বাংলাদেশের প্রায় ৬০ ভাগ তৈরি পোশাকের ক্রেতা ইউরো জোনের দেশগুলো। এই দেশগুলোও বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। ঝুকেছে পাকিস্তান, ভারত, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের দিকে।
ইউরো জোনে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ একই সময়ে পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ। ভারতের ও কম্বোডিয়ার বেড়েছে সাড়ে ২৪ শতাংশ। আর ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।
বর্তমান সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। দৈনিক ইনকিলাবের সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন