‘পুলিশের ওসি আজিজুর রহমান আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এরপর কোমর থেকে পিস্তল বের করে। তারপর ডান পায়ের ঊরুতে গুলি করে। এরপর বলে দৌড় দে। আমি তখন গুলি খেয়ে মাটিতে ছটফট করতে থাকি। একসময় জ্ঞান হারিয়ে দেখি হাসপাতালের বারান্দায়।’ চট্টগ্রামে মো. ইয়াছিন(৩২) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হচ্ছিলো হাসপাতালের বারান্দায়। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুবদল করার অভিযোগে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। আর অভিযোগ আনা হয়েছে নগরীর পাহাড়তলী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ প্রহরায় চলছে ইয়াছিনের চিকিৎসা। এই সময় তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাধা দেন পুলিশ সদস্যরা। বলেন, পরিবারের কাউকেই কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। উপরের নিষেধ আছে।
ইয়াছিনের পরিবার অভিযোগ করেন, থানার ওসির নেতৃত্বে তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ধরে নিয়ে গুলি চালিয়েছে থানার ওসি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের পাহাড়তলী বন্দর টোলরোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে থানার ওসি বলেছেন, ইয়াছিন একজন সন্ত্রাসী। সে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে পেট্রল সরবরাহ করতো। তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে বন্দুকযুদ্ধে সে আহত হয়।
ঘটনার দিন রাতে পাহাড়তলীর বন্দর টোলরোড এলাকায় নাশকতা করতে ১০/১২ জন যুবক নিয়ে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ইয়াছিন। এই সময় খবর পেয়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে যুবকরা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও তাদেরকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করে। একপর্যায়ে ইয়াছিন আহত হয়। এই ক্ষেত্রে পুলিশ তাকে গুলি করেনি। ইয়াছিনের সহযোগীরা তাকে গুলি করে পালিয়েছে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে যুবকরা এমন কাজ করেছে বলে দাবি থানার ওসির।
তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে আহত ইয়াছিন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে রাস্তায় ফেলে গুলি চালিয়েছে। আমি ওইদিন রাত সাড়ে নয়টায় নগরের দেওয়ানহাট এলাকা থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমাকে সেখান থেকে আটক করে কথা আছে বলে নিয়ে যায়। এরপর টোলরোড এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে গুলি করে ফেলে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ডান পায়ে গুলি খেয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। ডাক্তার বলেছে আমার পা কেটে ফেলতে হবে। আমি যুবদল করি সত্যি। কিন্তু কোনদিন নাশকতা করিনি। আমার বিরুদ্ধে পুলিশ ৬টি মামলা দিয়েছে। সবগুলো নাকি নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ।
হাসপাতালের বারান্দায় ইয়াছিনের আত্মীয় শহীদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ইয়াছিন পোশাক কারখানার ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করে। সামপ্রতিক পরিস্থিতিতে সে প্রকাশ্যে কোন মিছিল- সমাবেশ করেনি। কিন্তু তারপরও এলাকার সরকারদলীয় কিছু নেতার কথায় ওসি সাহেব তার সর্বনাশ করলো। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। শিগগিরই আদালতে মামলা করবো।
ইয়াছিনের বিষয়ে জানতে গতকাল সরজমিন পাহাড়তলীতে গিয়ে জানা যায়, সে যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। ঘটনার দিন রাতে সে একাই ছিল। তার পরিচয় সে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা মুরগির ফার্ম এলাকার রাজা মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে এর আগে থানায় ৬টি নাশকতার মামলা হয়েছে। সবক’টি মামলাই পুলিশের ওপর আক্রমণ ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড়তলী টোলরোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আহত ইয়াছিন নামে এক যুবদলকর্মীকে রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি শটগানের গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন। তাকে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ইয়াছিনের পরিবারের লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় দেওয়ান হাট এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। এরপর রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে সাগরিকা টোলরোডে নিয়ে যায়। সেখানেই তার পায়ে গুলি করা হয়। পরে তার কাছ থেকে দুটি পেট্রলবোমা ও দুটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে পাহাড়তলী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, ইয়াছিন যুবদলের একজন সন্ত্রাসী। সে পেট্রল সরবরাহ করে গাড়ি পুড়িয়ে দিতে ওস্তাদ। ঘটনার সময় তাকে আমরা টোলরোড এলাকা থেকে ধরতে গেলে সে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে আমরাও গুলি চালাই। কিন্তু তার এক সহযোগী পুলিশের দৃষ্টি ফেরাতে ইয়াছিনকে গুলি করে নিজেরাই পালিয়ে যায়। ওসি আরো বলেন, ইয়াছিনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা আছে। খবর নিয়ে জানতে পারবেন সে এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ সমালোচিত। তার বিরুদ্ধে আমরা নাশকতার মামলা করেছি। উৎসঃ মানব জমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন