ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

সন্ত্রাস দমনের জন্য প্রয়োজন আল কুরআনের শিক্ষা - আবদুল হালীম খাঁ

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশই অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। আর দিনের পর দিন একেকটি নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যার মধ্যে সন্ত্রাস এখন মহামারী ব্যাধির মতো প্রকট আকার ধারণ করে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এ সমস্যায় শুধু দেশ এবং জাতিই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষই অশান্তির আগুনে জ্বলছে। দেশের সকল উন্নতি ও অগ্রগতির পথ পদ্ধতি ও পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে।সন্ত্রাস কারোই কাম্য নয়। তবু সন্ত্রাস জনজীবনকে ভয়াবহ করে ফেলেছে। কেন এ সন্ত্রাস? এর কারণ কী?দেশের শাসক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাস দমনের জন্য যত রকম আইন জারি ও পন্থা অবলম্বন করছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যাপক আকার ধারণ করছে। প্রতিটি সন্ত্রাসই একটা বিদ্রোহ এক অপশক্তির বিস্ফোরণ। সন্ত্রাসের বহিঃপ্রকাশ যেখানে ঘটে তার উত্পত্তির স্থল সেখানে সীমাবদ্ধ নয়, তার জন্ম আরো দূরে ও গভীরে। সন্ত্রাসের নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে, তা ন্যায় বা অন্যায় যাই হোক।সন্ত্রাসের জন্ম হঠাত কোথাও হয় না। শারীরিক ব্যাধির মতো তা আস্তে আস্তে চোখের আড়ালে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যথাসময়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করে সঠিক ওষুধের ব্যবস্থা করলে তা নিরাময় সহজ হয়। তা না করে হাতুড়ে ডাক্তারের ব্যবস্থায় অপারেশন করে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করলে রোগ সারে না বরং আরো বৃদ্ধি পায় এবং সমস্ত শরীর রোগাক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সমাজ দেহের অবস্থা ঐ একই রূপ।
আমাদের সমাজ ও বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় এক সন্ত্রাস দমনের জন্য আরেকটি সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়। এক মারণাস্ত্র প্রতিরোধের জন্য তার চেয়ে আরো বেশি গুণ শক্তিশালী মারণাস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে সন্ত্রাস দমনের জন্য মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা। তাই কোনো দেশেই সন্ত্রাস দমন হচ্ছে না বরং আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সারা বিশ্বটাই এখন সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হয়েছে। বিশ্বটা এখন সন্ত্রাসে সন্ত্রাসে এমন ঘোলাটে হয়ে গেছে যে, বোঝা যাচ্ছে না কে সন্ত্রাসী আর কে সন্ত্রাসী নয়, কে শন্তিকামী আর কে অশান্তি সৃষ্টিকারী।আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, কাশ্মীর, মায়ানমার, মিসর, সিরিয়া, তুরস্কে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা কি সন্ত্রাসের ফল নয়? সন্ত্রাস করে সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব হয়েছে কোথায়ও?আল কুরআনে রয়েছে সন্ত্রাসসহ যাবতীয় অন্যায় অনাচার, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির সমাধান। এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান কুরআনে নেই। কুরআনে মানুষের কল্যাণ, উন্নতি ও শান্তির সব কিছু ভরে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন : ‘এ কিতাবে আমরা কোনো কিছুই বাদ দিইনি।’ (সূরা আনআম : ৩৮)আল্লাহতায়ালা সন্ত্রাসীদের স্বভাব চরিত্র ও কথাবার্তা কুরআনে বলে দিয়েছেন : ‘তাদেরকে যখন বলা হয় পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান, নিশ্চয়ই এর্ াফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।’ (সূরা বাকারা : ১২, ১৩)সন্ত্রাস দমন করতে চাইলে দেশ ও জাতির কল্যাণ করতে চাইলে সর্বোপরি নিজের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ চাইলে একমাত্র আল কুরআনের বিধান মানতে হবে। অন্য কোনো মানবরচিত বিধিবিধান অবলম্বন করলে এবং অন্য কোনো সমস্যাই দূর হবে না। কোনো ভাষণ হুমকি ধমকি জোর জুলুমে কোনো কাজ হবে না এবং অশান্তি সৃষ্টি ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। কোথাও কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলে কোনো কোনো কর্তা ব্যক্তিগণ সঠিক তথ্য না জেনেই ফস করেই মিডিয়ায় বলে ফেলেন ‘অমুকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে’। এর ফলে প্রকৃত সন্ত্রাসীরা আড়ালে অধরা থেকে যায়, তারা আরো বিপুল উত্সাহে অপকর্ম করার সুযোগ পেয়ে যায়।
এভাবে হিংসাবশতঃ অনুমান করে ডাহা মিথ্যা নতুন আরেক সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়।আল কুরআনেই রয়েছে, সকল সমস্যার সমাধান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ নির্দেশ। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি যে, সাবধান থাক। অচিরেই ভুল ফিতনা বা ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়বে। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সা.) তা থেকে বাঁচার উপায় কি? তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাব, যাতে তোমাদের পূর্ব পুরুষদের ঘটনা বিদ্যমান এবং ভবিষ্যৎ কালের খবরও বিদ্যমান। আর তাতে তোমাদের জন্য উপদেশাবলী ও আদেশ নিষেধ রয়েছে, তা সত্য ও অসত্যের মধ্যে ফয়সালা দানকারী এবং তা উপহাসের বস্তু নয়। যে কেউ তাকে অহঙ্কারপূর্বক পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন। আর যে ব্যক্তি তাঁর হিদায়াত ছাড়া অন্য হিদায়াত সন্ধান করে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেন। তা (কুরআন) আল্লাহর দৃঢ় রশি, মহাজ্ঞানীর বক্তব্য ধারণকারী গ্রন্থ এবং সহজ ও সরল পথের দিক নির্দেশনাকারী, যা দ্বারা মানুষের অন্তঃকরণ কলুষিত হয় না, মানুষ সন্দেহে পতিত হয় না এবং ধোঁকা খায় না। তার দ্বারা আলেমগণ তৃপ্তি লাভ করে না (আলেমগণের তা থেকে জ্ঞান লাভ করা শেষ হয় না)। বার বার পাঠ করলেও পুরনো হয় না, তার অভিনবত্বের শেষ হয় না। যখনই জীনজাতি তা শুনলো, তখনই সাথে সাথে তারা বলল, নিশ্চয়ই আমরা আশ্চর্য কুরআন শুনেছি, যা সৎ পথের দিকে লোককে ধাবিত করে। সুতরাং আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। যে ব্যক্তি কুরআন মুতাবেক কথা বলল, সে সত্যই বলল, যে তাতে আমল করলো, সওয়াব প্রাপ্ত হলো, যে কুরআন মুতাবেক হুকুম করল সে ন্যায় বিচার করল, যে ব্যক্তি কুরআনের দিকে মানুষকে ডাকবে, সে সতপথ প্রাপ্ত হবে’। (তিরমিজী শরীফ)
আধুনিক শিক্ষিত অনেক মুসলমান মনে করেন কুরআন হলো সেকেলে, মোল্লা মুন্সীদের কেতাব, নামাজ, রোজা, হজ জাকাতের কিতাব। আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতির কালে এটা অচল।এই কুরআন আসলে কী? এর মর্যাদা ও গুরুত্ব কত অপরিসীম তা যাদের জানা নেই তারাই এমনি বাজে কথা বলে থাকেন। আসলে এটি শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়, ঝাঁড় ফুঁক তাবিজ কবজের কিতাব নয়। এটি শুধু সওয়াবের তিলাওয়াত বা হেফজ করে রাখার কিতাব নয়। শতাব্দীকাল যাবত প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী কুরআন শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় কিতাব হিসাবে নির্দিষ্ট হয়ে আছে। কিন্তু কুরআন মজীদ সর্বকালের সমগ্র মানব জাতির জীবন পরিচালনার অভ্রান্ত নির্দেশিকতামূলক অতুলনীয় গ্রন্থ। এ কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে, কুরআন শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও জান্নাত জাহান্নামের কথা বলে না, কুরআন মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সকল কথাই সুস্পষ্টভাবে বলে। এ মহাগ্রন্থে রয়েছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, শ্রমনীতি শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, সন্ধিনীতি, সাংস্কৃতিক নীতি, রাষ্ট্র ও সামষ্টি জীবনাচারের নীতিমালা, পরস্পরের সাথে চুক্তি। বিয়ে, তালাক, সন্তান-সন্তুতি প্রতিপালননীতি, উত্তরাধিকার আইন, ফৌজদারী দণ্ডবিধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
সততা, স্বচ্ছতা, ব্যবসা-বাণিজ্য নীতিসহ ইহকাল ও পরকালের জবাবদিহিতা তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনার সকল বিষয়ের বিস্ময়কর সমন্বয়। এদিক থেকে গোটা বিশ্বে কুরআনের সমার্থক বা তুলনীয় দ্বিতীয় আরেকটি গ্রন্থের অস্তিত্ব নেই। ঠিক এ কারণে ই বলা হয়, মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়। বিংশ শতাব্দী বা একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা যে সকল তথ্য ও উপাত্ত পৃথিবীবাসীর সম্মুখে পেশ করে সমগ্র মানবমণ্ডলীকে চমকে দিচ্ছেন, তার তুলনায় সর্বাধিক নির্ভুল অভ্রান্ত অপরিবর্তনীয় বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত পবিত্র কুরআন চৌদ্দশত বছর পূর্বেই মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা তা নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করছেন মাত্র।বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ এই কুরআন মহান আল্লাহর এক চিরন্তন ও শাশ্বত কিতাব।নবী করীম (সা.) কুরআন মজীদ সম্পর্কে বলেছেন, কুরআন কোনোদিন পুরাতন বা জীর্ণ হবে না, এর আশ্চর্য ধরনের বিস্ময়কারীতা কখনো শেষ হবে না। কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের মশাল এবং এই কিতাব জ্ঞান বিজ্ঞানের এক কুলকিনারাহীন অগাধ জলধি’। (তিরমিজী শরীফ)আল কুরআন মানুষকে সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস থেকে বিরত থাকার এবং সত কাজ করার নির্দেশ দেয়। যারা আল কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত তারাই একমাত্র এ সকল মহত গুণের অধিকারী হতে পারে।মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো, তোমরা মানুষকে সত পথের দিকে আহ্বান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। (সূরা আলে ইমরান : ১১০)তিনি আরো বলেছেন, নামাজ কায়েম করো, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে লজ্জাহীনতা, অশ্লীলতা ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’(সূরা আল আনকাবুত : ৪৫)
হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করল, ঈমান কাকে বলে তার নিদর্শন বা পরিচয় কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের ভালা কাজ যখন তোমাদের আনন্দ দান করবে এবং খারাপ কাজ ও অন্যায় কাজ তোমাদিগকে অনুতপ্ত করবে তখন তুমি বুঝবে যে, তুমি মুমিন। (মুসনাদে আহমদ)মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটা দল থাকবে, যারা জাতির লোকদেরকে আহ্বান করবে কল্যাণ ও ন্যায় পথের দিকে এবং বিরত রাখবে অকল্যাণ ও অন্যায় থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪) হজরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না আল্লাহও তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ (বুখারী শরীফ)হুমকি ধমকি দিয়ে নয়, জোরজবরদস্তি করে নয়, সন্ত্রাস দমনের জন্য প্রয়োজন আল কুরআনের শিক্ষা। একমাত্র আল কুরআনের শিক্ষা মানুষের স্বভাব চরিত্র আচার-আচরণ সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করতে পারে। এ শিক্ষাব্যবস্থা মহান স্রষ্টার সকল দেশের সকল যুগের সকল মানুষের জন্য উপযোগী। আল কুরআনের এই শিক্ষা উঠিয়ে দিয়ে মানুষের তৈরি-পরিকল্পিত শিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা এখন সুশিক্ষা পাচ্ছে না। সত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না। পাচ্ছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা। এই কুশিক্ষার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও তারা হচ্ছে খুনী, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ ও নারী নির্যাতনকারী। তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, পরকালে বিশ্বাস নেই, লজ্জা শরম নেই, মানবতা বোধ নেই। তাদের মধ্যে সত্যমিথ্যার জ্ঞান নেই, হালাল হারামের জ্ঞান নেই। তাদের অধীনে কেউ নিরাপদ নয় এবং কোনো জিনিসও নিরাপদ নয়। তারা যেখানে থাকবে সেখানেই সন্ত্রাস ও অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। তারা এখন শুধু পুকুর চুরি করে না, তারা সাগর মহাসাগর চুরি করে, তারা এখন আর দু’চার বাড়ি বা দু’একটা গ্রাম লুট করে না, তারা আস্ত দেশ লুট করা শুরু করেছে। এর মূল কারণ হলো তাদের মধ্যে আল্লাহ ও পরকালের ভয় নেই-বিশ্বাস নেই। প্রকৃত আল্লাহর ভয় থেকে যে শিক্ষা শুরু হয় সেটিই প্রকৃত কল্যাণকর শিক্ষা এবং সেটিই প্রকৃত জ্ঞান ও ইসলামী জীবন দর্শন। আল কুরআনে আল্লাহতায়ালা অনেক স্থানে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বার বার বলেছেন ‘আল্লাহকে ভয় করো,’ ‘আমাকে ভয় করো’।
বার বার আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ দেয়ার কারণ কী? এর তাত্পর্য কী?আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে রয়েছে সকল প্রকার কল্যাণ, শান্তি, উন্নতি, সফলতা ও মুক্তি। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে ভয় করা উচিত। আর সত্যিকার মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০২)তিনি আরো বলেছেন, অতএব তাদের ভয় করো না, কেবল আমাকেই ভয় করো, যাতে আমি আমার অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তোমাদের দান করতে পারি এবং তোমরা সত পথে পরিচালিত হতে পারো।’ (সূরা বাকারা : ১৫০)এ আয়াত থেকে এ কথাও বুঝা যায় সত পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য অন্তরে আল্লাহর ভয় প্রয়োজন।আরো ইরশাদ হয়েছে : তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : ২৮২)রুহুল মায়ানীতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহকে ভয় করো’ অর্থ হচ্ছে তিনি যা আদেশ করেছেন তা করা এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আর আল্লাহ তোমাদেরকে শিখিয়েছেন এর অর্থ হলো, তিনি (আল্লাহ) তাঁর আইন কানুন যা তোমাদের আকর্ষণীয় বস্তুগুলো ঘিরে রয়েছে। আর এ কারণেই কান্না আসবে তোমাদের।’আমাদের যুব সমাজ আদর্শহীন শিক্ষায় শিক্ষিত। প্রকৃত মানবিক গুণ বিকাশের শিক্ষা এগুলো নয়, এগুলো হচ্ছে চরিত্র ধ্বংসকারী শিক্ষা। তাই তারা শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে সারা কর্মজীবন অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি, খুন, সন্ত্রাস, লুটপাট ব্যভিচারসহ যাবতীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে।অন্যদিকে আল কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ আল্লাহ ও পরকালে ভয় করে, ভালো কাজে পুরস্কার ও অন্যায় কাজের শাস্তি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। তাই তারা সকল অন্যায় অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য মানুষকে অন্যায় অসত কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে, এ চেষ্টা করাকে তারা সওয়াবের কাজ মনে করে।মহান আল্লাহ বলেন : তোমরাই সর্বোত্তম জাতি। তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য’। (আলে ইমরান)নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমরা নম্রতার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রেরিত হয়েছে, কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য প্রেরিত হওনি। (বুখারী শরীফ)
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : তোমরা সত্কর্মের নির্দেশ দাও, দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ কর। অর্থাত যে বিশেষ কাজের জন্য মুসলমানদের সৃষ্টি করা হয়েছে তা হচ্ছে তারা গোটা মানবজাতিকে যাবতীয় অন্যায় অনাচার, দুর্নীতি সন্ত্রাস থেকে বিরত রাখবে এবং ভালো কাজের পথে পরিচালিত করবে।আল কুরআনের শিক্ষাকে লঙ্ঘন করলে সমাজে যে সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তা কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো দুষ্কৃতি বা জুলুম বিকাশ বৃদ্ধিতে কোনো রূপ সহায়তা করো না।’# ‘যে কেউ চুরি করবে তার হাত কেটে দাও’।# যে কেউ ব্যভিচার করবে তার শাস্তি স্বরূপ একশ বেত্রাঘাত কর।’# যে কেউ সতী সাধ্বি নারীর উপর জিনার অপরাধ চালাবে, তাকে আশিটি চাবুক মারো।# যে ব্যক্তি কাউকে ইচ্ছেকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শিরচ্ছেদ করো।# যে একজন মানুষকে হত্যা করল সে সমস্ত মানবজাতিকে হত্যা করল।আজ বিশ্বের দু’একটি দেশ বাদে কোথাও কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠিত নেই। তাই সন্ত্রাস অন্যায় প্রতিরোধের জন্য মানব রচিত বস্তা বস্তা আইন থাকা সত্ত্বেও অন্যায়, সন্ত্রাস, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না বরং তা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করলে, কুরআনি আইন চালু থাকলে কোনো দেশেই এতো অসংখ্য অন্যায় দুর্নীতি সন্ত্রাস সংঘটিত হতো না। আল্লাহ ও পরকালের শাস্তির ভয় যাদের মধ্যে আছে তারা কোনো প্রকার অন্যায় অপকর্ম করে না, মানুষকে খুন করে না, গুম করে না, কারো অধিকার নষ্ট করে না, চুরি-ডাকাতি, লুটপাট, ব্যভিচার করে না, কারো মানহানি করে না, এমনকি মনে মনে অন্যের ক্ষতির চিন্তাও করে না, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে। আল কুরআনের শিক্ষায় মানুষ এতোই সত মহত সাধু এবং উন্নত চরিত্র-স্বভাবে পরিণত হয় যে, অকারণে তার নিজের গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন