ঝিনাইদহের ঘরে ঘরে এখন সাদাপোশাক ও খুন আতঙ্ক। সাদা পোশাকধারীরা যাদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাদের অধিকাংশের লাশ মিলছে বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় সূত্র বলেছে, এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত শত্রুতার শোধও তুলে নিচ্ছে। স্থানীয়রা বলেছেন, গত ৮ মাসে এই এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাতজনসহ নিহত হয়েছে ৩৩ জন। নিহতদের মধ্যে পুরোহিত-সেবায়েতও রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহে প্রায়ই ঘটছে সাদাপোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা। এদেরমধ্যে সিংহভাগের লাশ মিলছে। সম্প্রতি এক শিক্ষকের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ দাবি করেছে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে এই এলাকায়। গত ৮ মাসে সদর উপজেলায় এক নারী ও এক যুবকসহ ১১ জন, শৈলকুপায় তিন শিশু দুই নারীসহ ৯ জন, কালীগঞ্জে এক যুবকসহ ৪ জন, হরিণাকুন্ডুতে এক নারীসহ ৮ জন ও মহেশপুরে এক যুবকসহ ৪ জন। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম মামুন (২৫) নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্র নিহত হয়। ৪ জুলাই শৈলকুপা উপজেলায় আব্দুল হান্নান নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ২ জুলাই সদর উপজেলার মধুপুর কবরস্থানে ইবনুল ইসলাম পারভেজ (২৯) নামে এক শিবির নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসার ৬ তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় পারভেজকে এবং পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে পরিবারের দাবী। ১ জুলাই সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে স্থানীয় শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে পুলিশের গুলিতে আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান নামে দুই শিবির কর্মী নিহত হয়। ১৩ জুন সদর উপজেলার নিজ বাড়ি বদনপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন শহীদ আল মাহমুদ তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের দাবি। ১৩ এপ্রিল দুই শিবির নেতা যশোর এমএম কলেজের অনার্স বাংলা ৩য় বর্ষের ছাত্র আবুজার গিফারি ও ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৪ মার্চ হরিণাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হিঙ্গারপাড়া গ্রামের শোষপাড়া মাঠ থেকে জসিম উদ্দিন নামে এক শিবির সভাপতির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৮ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজের চার দিন পর মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া গ্রামের গম ক্ষেত থেকে হাকিমুল ইসলাম পেনু নামে এক সেলুন কর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি শৈলকুপা উপজেলার বিজুলীয়া গ্রাম থেকে লিটন বিশ্বাস নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি শৈলকুপায় হাবিবপুর গ্রামের শাহিন শেখ নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে ১২ আগষ্ট মাদ্রাসা শিক্ষক ইদ্রিস আলী পান্না ও শহিদুল ইসলাম পচার লাশ পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন