বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ একজন মানুষের পরিবারে বসবাস এবং পরিবারের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় বলে তার একটি পারিবারিক জীবন রয়েছে,সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক বিধি বিধান মেনে বসবাস করতে হয় বলে তার একটি সামাজিক জীবন রয়েছে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকতে হয় বলে তার একটি অর্থনৈতিক জীবন রয়েছে এবং সরকার পরিবর্তনসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় বিধি বিধান মেনে চলতে হয় বলে তার একটি রাজনৈতিক জীবন রয়েছে অর্থাৎ পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবন এগুলো হলো মানুষের জীবন পরিচালনার বিভিন্ন দিক।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মুসলিম নামধারী অনেকে এর সাথে ধর্মীয় জীবনটাকে জুড়িয়ে দিয়ে বুঝাতে চান যে ধর্ম একটা আলাদা বিষয় এর সাথে পারিবারিক ,সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।অথচ একজন মানুষের জীবনের সমস্ত দিকগুলো ধর্ম মোতাবেক পরিচালনার মধ্যেই তার ধর্মীয় জীবন নিহিত রয়েছে।
বেশির ভাগ মুসলমানই কিছু মৌলিক ইবাদতের ক্ষেত্রে ধর্মকে অনুসরন করলেও সামগ্রিক জীবন পরিচালনায় মানব রচিত মতবাদ অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ(Secula rism) ,সমাজবাদ(Communism), পূজিবাদ (Capitalism) ও জাতীয়তাবাদ (Nationalism)এর আদর্শ অনুসরণ করে থাকেন। তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে ধর্ম অনুসরণ করলেও সামগ্রিক জীবনে ধর্মকে অস্বিকার করেন।তারা নামাজ রোজা হজ্ব পালন করলেও রাজৈতিক ক্ষেত্রে মানব রচিত মতাদর্শে বিশ্বাস ,অসৎ এবং ইসলাম বিদ্বেষি নেতৃত্বকে সমর্থন করেন , অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুরআনে নিষিদ্ধ সুদ ব্যবস্থা এবং দুর্নীতিকে বেছে নেন,পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য ইহুদিবাদী এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহন করেন।অথচ আল্লাহপাক কুরআনে ঘোষণা করেছেন~
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন (জীবন বিধান) একমাত্র ইসলাম।~ ( সূরা আলে ইমরান-১৯)
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। আর তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন(জীবন বিধান) হিসাবে মনোনীত করলাম।(সূরা মায়িদা-৩)
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ।(সূরা আলে ইমরান-৮৫)
সাবধান !সৃষ্টি তারই ,এর উপর প্রভূত্ব চালাবার-একে শাসন করার অধিকারই একমাত্র তারই।( সূরা আরাফ-৫৪)
ইসলামে রাজনীতি বা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে রাসূল( সঃ )বলেন,এমন একটি সময় আসবে যখন অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ফিতনা ফাসাদ সমগ্র দুনিয়াকে সম্পূর্ণরুপে আচ্ছন্ন করে ফেলবে ।একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রসূল সেই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় কি?রাসূল (সঃ)বলেন,আল্লাহর দেয়া কুরআন-আল্লাহর দেয়া বিধানই বাঁচবার একমাত্র উপায়। তাতে অতীতের জাতিগুলোর ইতিহাস আছে,ভবিষ্যতের মানব বংশের অবস্থা ও ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে তোমাদের পারস্পরিক বিষয় সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় আইন কানুনও তাতে রয়েছে।বস্তুতঃ উহা এক চূড়ান্ত বিধান।(তিরমিজি)
সূতরাং ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।মানুষের জীবনের কোনো একটি বিভাগই এর বাহিরে নেই।কুরআনের কেন্দ্রিয় আলোচ্য বিষয়ই হলো মানুষ।এতে কিসে মানুষের কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ আলোচনা করা হয়েছে।
হযরত আনাস(রাঃ)হতে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূল (সঃ)বলেছেন,আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে গেলাম।তোমরা যতদিন এ দুটি আকঁড়ে থাকবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবেনা।একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব কুরআন এবং অপরটি হচ্ছে তার রাসূলের সূন্নাহ।(মুয়াত্তা)
সুতরাং মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র কিছু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয় সমগ্র জীবনটাকে কুরআন এবং সূন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত করতে হবে ।তাহলে দুনিয়াতে শান্তি এবং আখেরাতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু ইসলাম এবং কিছু মানব রচিত মতবাদের অনুসরণের সুযোগ নেই। সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য তাদেরকে আজ অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে।দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন আজ নিত্য ব্যাপার।প্রতিবাদের নুন্যতম শক্তিটুকুও আমাদের নেই। মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের একমাত্র কারন হলো তাদের দ্বিমূখী চরিত্র। মুসলমানরা জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি এই দ্বিমূখী চরিত্র পরিহার না করে তাহলে ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন