বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক ১৪ আগষ্ট ২০১৬্ইং সোমবারঃ অনিদ্রা : শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। যদি কোন কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ঠিকমত ঘুম নাহয়, তাকে অনিদ্রা বলে। অর্থাৎ কারণ যাই হোক, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াই অনিদ্রা। অনিদ্রা একটি মানসিক রোগলক্ষণ।
কতটুক ঘুম প্রয়োজন : একজন মানুষের জন্য কয় ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স ও পরিশ্রমের উপর। নবজাতক শিশু ২৪ঘণ্টার মধ্যে ১৭/১৮ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়। কিশোর বয়সে ঘুমের পরিামণ ৯/১০ঘণ্টা। প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ মানুষের জন্য ৭/৮ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে ঘুম কিছুটা কমে আসে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রাত্রে একটানা ৩/৪ঘণ্টা ভাল ঘুম দরকার। বাকি সময় ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঘুম হতে পারে।
অনিদ্রা কোন রোগ নয়, বরং একটি রোগলক্ষণ। নানাবিধ কারণে মানুষের অনিদ্রা হয়, নিদ্রায় ব্যঘাত ঘটে বা ঘটতে পারে। তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০শতাংশ মানুষ অনিদ্রায় ভোগেন। উদ্বেগের খবর হচ্ছে দিন দিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কজনক তথ্য হচ্ছে যে, যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের মধ্যে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন মাত্র ৬শতাংশ মানুষ। ৭০ শতাংশ মানুষ কোন চিকিৎসাই নেন না। তারা এটাকে রোগলক্ষণ বলেও মনে করেন না। অনেকে আবার এটাকে একেবারে হাল্কা রোগ মনে করে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকান থেকে নিজেই নিজের জন্য ওষুধ নির্বাচন করে ঘুমের ওষুধ কিনে খায়। চিকিৎসা না নেয়া এবং নিজে নিজে ওষুধ কিনে খাওয়া দুটোই মারাত্মক।
ঘুমের ওষুধ সেবনে সবসময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবনে যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য ঘুমের ওষুধ খুবই ক্ষতিকর। কারণ ঘুমের ওষুধ সেবনে স্নায়ু ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে থাকলে ওষুধের উপর নির্ভর হয়ে উঠে। মনে রাখতে হবে, অনিদ্রা রোগ নয়, বরং রোগলক্ষণ। একজন চিকিৎসকই চিহ্নিত করতে পারবেন অনিদ্রার কারণ। এবং সে অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করবেন। বয়স এবং রোগজটিলতার উপর নির্ভর করে ওষুধের মাত্রা ও শক্তি নির্ধারণ করতে হয়। চিকিৎসক ছাড়া একাজ অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়।
একটানা দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়া ক্ষতিকর। এতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে, দেহ অবসাদগ্রস্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। এতে কার্যক্ষমতা কমে যায়। ওষুধের মাত্রা বেশি হলে মাথাধরাসহ হৃদরোগের ন্যায় জটিল রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে।
যতটা সম্ভব ঘুমের ওষুধ নাখাওয়াই ভাল। অনিদ্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়, কিংবা কোন জটিল রোগের কারণে হয়, অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। তবে, অনিদ্রা দেখা দিলেই বা ঘুম একটু কম হলেই চিকিৎসকের কাছে ছুটে যেতে হবে, ওষুধ খেতে হবে, তা নয়। খাওয়া-দাওয়াসহ অভ্যাস এবং প্রত্যাহিক জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে, এই সমস্যা অনেকটা কেটে যায়। যেমন- রুটিন করে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমানোর ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে। ঘুম না আসলেও বিছানায় শুয়ে পড়তে হবে। এভাবে কিছু দিন অভ্যাস করলে আস্তে আস্তে অনিদ্রা কেটে যাবে।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে। রাত্রে ঘুম ভাল হয়নি তাই বলে সকালে দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা যাবে না। রাতে ঘুম কম হোক বা নাহোক, সকালে তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়লে পরবর্তী রাতে ঘুম ঠিক হয়ে যাবে।
বিছানায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় হয় রাতের প্রথম ভাগ এবং বিছানা ছাড়ার উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশটি খুবই বিজ্ঞান সম্মত। এশার নামযের পর ঘুমাতে যাওয়া এবং ফজরের নামায আদায়ের জন্য ভোরে বিছানা ছাড়াতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রাতে চা-কফি বর্জন করা দরকার। কারণ এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমানোর আগে এক কাপ হাল্কা গরম দুধ পান করলে ভাল ঘুম হয়। কারণ দুধ মাংসপেশিকে শিথিল করে, যা ঘুমের সহায়ক। মনে রাখতে হবে, ওষুধ খেয়ে ঘুমের অভ্যাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যতটা সম্ভব ঘুমের ওষুধ পরিহার করা দরকার। অনিদ্রা হলেই ওষুধ নয়। বরং কিভাবে অনিদ্রা কাটানো যায় সে চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন