দিন দিন জনসমর্থন কমছে আওয়ামী লীগের। অনেকটা কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ। সম্প্রতি দলের সমাবেশের চিত্র দেখলে এমনটিই মনে হয়। আওয়ামী লীগের সর্বশেষে ২টি জনসমবেশে লোকসমাগমে ভাটা পড়ায় খোদ নেতা কর্মীদের মাঝেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর দলটি ক্রমান্বয়ে প্রশাসন নির্ভর হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্বেগটা আরো বেড়ে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই এখন সমঝোতার ডাক উঠছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশে করে আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ সমাবেশে লাখ লাখ লোকের জমায়াতে করার কথা জানিয়েছিল দলটি। এ নিয়ে দলের একাধিক প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছিল। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন মায়া বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে এনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে তাক লাগিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডের সিটি কপোরেশেনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৭ মার্চের জনসমাবেশে লোক সমাগম হয়েছে অনেক কম।
সূত্র জানায়, সমাবেশের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৩টায়। ঠিক তখন লোকসমাগম ছিল খুবই নগণ্য। এইভাবে কর্মী উপস্থিতি কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে হতাশা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতুহলের কমতি নেই। দলের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা না কি অন্য কোন বিশেষ ব্যস্ততায় কর্মীরা দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিত হতে পারছেন না সে প্রশ্নও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এখন।
আর আগে গত ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছিল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঐ সমাবেশেও নেতকর্মীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সভা-সমাবেশ আহ্বান করার পরও কর্মীদের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ায় খোদ আওয়ামী শিবিরেই দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। গতানুগতিক সভা-সমাবেশ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তবে বিরোধীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করেন দেশের সাধারণ মানুষের মতো কর্মীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে।
সূত্র জানায়, জনগণের পর দল থেকেও প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে সাংগঠনিক শক্তি নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভরসা এখন সরকারি প্রশাসন। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর ঢাকাসহ মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ভিত্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। জনমুখী কর্মসূচি দিয়ে সাধারণ মানুষকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি অনেক দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এর ফলে বিভিন্ন কাজে দেশের অন্যতম প্রধান দলটিকে প্রশাসনের সহায়তা নিতে হচ্ছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় দল এ অবস্থায় পড়েছে। এ ছাড়া যেসব নেতা জনগণকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখেছে তাদের মূল্য না দেয়াও বর্তমান অবস্থায় আসার বড় একটি কারণ বলে মনে করেন তারা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, আত্মীয়স্বজন পরিবেষ্টিত মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগী ও চাটুকারদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ত্যাগী কর্মীরা দূরে সরে যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে জেলা-উপজেলা শাখার সম্মেলন না হওয়া এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত না থাকার জন্যও আওয়ামী লীগ এ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে তারা মনে করেন।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে খুব শক্তিশালী মনে হলেও এর সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে। দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। পাশাপাশি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা একশ্রেণীর চাটুকার দুর্নীতি ও লুটপাট করে অঢেল টাকার মালিক হচ্ছে।
তবে এ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর। তিনি বলেন, এটা অযৌক্তিক। আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্তিশালী দল।
সূত্র জানায় গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোটের ধারাবহিক কর্মসূচি চলে আসছে। এসব কর্মসূচি ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করছে প্রশাসনকে। দলীয় জনশক্তিতে ভাটা পড়ায় আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয়েছে হতাশ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ হতাশা থেকে তারাও চায় একটা সমাঝোতা হোক। প্রশাসন নির্ভর হয়ে দল শক্তিশালী থাকতে পারে না বলে মত তাদের।
উল্লেখ্য এর আগে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ বিভিন্ন সভাসমবেশের প্রস্তুতি ঢাক ঢোল পিটিয়ে করা হলেও কাক্সিক্ষত নেতাকর্মী উপস্থিত হয়নি।
উৎসঃ ইউরোবিডি নিউজ
্
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন