ঝিনাইদহে পুলিশ কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগ করা নিয়ে বাণিজ্যের খবর ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে । ফাঁস হয়ে পড়েছে কোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্যর খবর । শনিবার রাত ৭টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোঃ আব্দুল হাই এমপি প্রকাশ্যে এ নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন । তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি গত ৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিকে অবহিত করা হয়েছে । সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনস মাঠে কনস্টেবল পদে জনবল নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাই শুরু হয় । এর পর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে। ডাক্তারি পরীক্ষার পরে চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২৮ তারিখে । প্রাপ্ত তথ্য মতে পুরুষ ও নারীসহ মোট ১২৭ জনকে নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে । এর মধ্যে পুরুষ ১১০ জন, নারী ১৭ জন । অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে আরো দুই নারীসহ ১০ জনকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৬৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৪ জন এবং পুলিশ পোশ্য কোটায় চাকরি হয়েছে ৯ জন পুরুষের । সাধারণ কোটায় ১২ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪ জন এবং পুলিশ পোশ্য কোটায় চাকরি হয়েছে ১ জন নারীর। সূত্র মতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি এবং সদস্য ছিলেন কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনস হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফেরদৌস হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই এমপি অভিযোগ করে বলেন যে, নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের কাছ থেকে তালিকা চেয়ে নেয়া হয় । অথচ সরবরাহ করা তালিকা থেকে দুই একজনকে চাকরি দেয়া হলেও হতে পারে। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে আরো বলেন, শৈলকুপা উপজেলায় যে ১৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সবাই বিএনপি ও জামায়াতের অনুসারী। এছাড়াও বাকি দুইজন দলীয় এমপি। ঝিনাইদহ-৩ আসনের নবী নেওয়াজ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনোয়ারুল আজীম আনারের সুপারিশেও নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি । আব্দুল হাই এমপি সাংবাদিকদের বলেছেন, এবারের পুলিশে লোক নিয়োগে যে অর্থ বাণিজ্য করা হয়েছে, সে খবর লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরণের চাকরি বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের নাম না প্রকাশ করলেও নিয়োগ বোর্ডের সমালোচনা করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের এ নেতা আরো বলেছেন, গত ৫ তারিখ রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে নালিশ জানানো হয়েছে । এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলার আরো দুইজন দলীয় এমপি। এ দিকে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সরকার দলীয় এমপি নবী নেওয়াজের ভাই মইনুল ইসলাম চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে গোপনে ঘুষের টাকা ফেরৎ দেয়া শুরু করেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে । সে পুলিশ কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের জন্য গত মাসের ২৩ তারিখে মহেশপুর বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র খুলে বসেন । সেখানে ডাক্তারীসহ নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ২৭ যুবককে চুড়ান্ত করা হয়। এর পর তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি টাকা। একই ধরনের আরো খবর পাওয়া গেছে। সূত্র মতে সরকার দলীয় নেতারা প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন তারা বিপাকে পড়েছেন। কারণ তাদের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে । এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও । জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ মতান্তরে ৮ লাখ টাকা নেয়ার খবরও এখন সকলের মুখে মুখে। অপর দিকে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ আলাতাফ হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সরকারী দলের নেতাদের করা সুপারিশের তালিকায় বিএনপি ও জামায়াতের লোক পাওয়া গেছে। পুলিশের গোপনীয় প্রাথমিক তদন্তে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এখন যাদের নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে তারা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে পুলিশ সুপার আরো বলেছেন, এ ধরণের ঘটনার সাথে পুলিশ বিভাগের কেউ জড়িত নন । বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে ।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সৌজৈন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন