মানব জীবন বড় বিচিত্র। চলার পথে একজন মানুষকে প্রতিনিয়ত অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়। নারী হোক বা পুরুষ,শিশু হোক বা বৃদ্ধ কিংবা বয়ঃসন্ধিকাল সবার জীবন হাঁসি-কান্না আনন্দ-বেদনায় ভরা। সব কিছু মোকাবেলা করেই মানুষকে সামনে এগুতে হয়। জীবনে কখন কী হয়ে যায় মানুষ তা আগাম বলতে পারে না। জীবন যেহেতু চলমান, তাই জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন আছে তেমনি আছে না পাওয়ার বেদনা। নানাবিধ কষ্ট আর অপ্রাপ্তি থেকে মানুষের মনে রাগ ও ক্রোধ জন্ম নিতে পারে। আবার কিছু মানুষ জন্মগতভাবে বা স্বভাবগতভাবে রাগী। অল্পেই রেগে যাওয়া কিছু মানুষের স্বভাব। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হঠাৎ হোক বা স্বভাবগত কারণে,রাগ থেকে সাবধান। রাগ মানুষের বড় শত্রু। রাগের কারণে যে কোন সময় আপনার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
রাগের কারণে মানুষকে লজ্জায় পড়তে হয়। অনেক সময় দেখা যায় আপনি কারো সাথে রেগে গেলেন। কিন্তু বিষয়টা এমন হয়ে গেল যে,পরবর্তীতে আপনি নিজেই অনুতপ্ত হলেন এবং লজ্জায় পড়ে গেলেন। এই লজ্জা ও অনুতাপ আপনার ভেতরে একপ্রকার হীনমন্যতা জন্ম দেয় এবং মানুষের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।
রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে দুভাবে। যেমন মুখে চিৎকার করে কথা বলা,অশালীন অঙ্গভঙ্গি বা বাক্য ব্যবহার এবং আরো আক্রমণাত্মক হয়ে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করা। রাগে হাত-পা ছুঁড়া কিংবা প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা। যিনি যেভাবেই রাগের বহিঃপ্রকাশ করুক সর্বসাধারণ্যে তিনি যে হাল্কা হয়ে যাচ্ছেন,তার ব্যক্তিত্ব যে ধূলায় মিশে যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে না পারলেও বাস্তবতা তাই।
বিষয়টা আপনি আপনাকে দিয়েই মূল্যায়ন করতে পারেন। আপনি কি আপনার রাগী প্রতিবেশির কল্যাণ কামনা করেন? বদমেজাজি বন্ধুকে পছন্দ করেন? আপনার অফিসের রাগী ও বদমেজাজী সিনিয়র কর্মকর্তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেন? আপনি জানেন যে, একজন শিক্ষক তিনি খুবই ভাল পড়ান কিন্তু অতিরিক্ত রাগী আপনি কি তাকে আপনার সন্তানকে পড়ার জন্য রাখবেন? জেনেশুনে একজন রাগী ড্রাইভারকে কি আপনার গাড়ি চালানোর জন্য নিয়োগ দেবেন?একজন দোকানদার যার দোকানের প্রতিটি দ্রব্য সামগ্রী গুণগতমানে ভাল,ওজনেও সঠিক কিন্তু সে রাগী বদমেজাজী। আপনি কি নিয়মিত তার গ্রাহক হবেন?
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আপনার পক্ষ থেকে ‘না’ হয়,আপনি যদি রাগী হোন,বদমেজাজি হোন আপনার ক্ষেত্রেও সব মানুষের মূল্যায়ন একই হবে।
মাত্রাতিরিক্ত রাগ মানুষের ক্ষতি ছাড়া কখনো কোন কল্যাণ বয়ে আনে না।
রাগ বিষয়ে সানফ্রান্সিসকো কংগ্রেস ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং বিভাগ এক গবেষণা পরিচালনা করে। ৮০জন পুরুষ এবং ১২৩জন নারীর উপর পরিচালিত দীর্ঘ গবেষণায় রাগের বিভিন্ন দিক উঠে আসে। নারী-পুরুষের রাগের তারতম্য,উভয়ের রাগ প্রকাশের ধরণ.দেহের অঙ্গভঙ্গি রাগের পরে তাদের আচরণ ইত্যাদি নানা বিষয় গবেষণায় স্থান পায়। গবেষণায় যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে তা হল-মাত্রাতিরিক্ত রাগ শুধুই ক্ষতি বয়ে আনে, এতে কোন কল্যাণ নেই। রাগ নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন- মানব দেহের জন্য ধূমপান,মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি থেকেও রাগ ক্ষতিকর। যাদের রাগ বেশি তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। রাগের কারণে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও ঘটতে পারে। সর্বাবস্থায় রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা হয়ত এক দিনে হবে না। আস্তে আস্তে রাগ দমনের চেষ্টা করা দরকার। মনে রাখতে হবে রাগ মানে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন।
রাগ কখনো ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না,বরং রাগের মাধ্যমে ব্যক্তির গোঁয়ার্তুমি এবং অপরিপক্বতা প্রকাশ পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন