লন্ডনবাংলা রিপোর্ট: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মেম্বার টিউলিপ সিদ্দিকীর পার্লামেন্ট বক্তব্য শুনতে মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে লন্ডনে এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ৬দিনে এ সফরকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সফর হিসেবে বলা হয়েছে। তারপরও এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ সরকার দিতে বাধ্য। কারণ সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে আইন পাস হয়েছে তাতে বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের দেশে বিদেশে নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বাসস্থানের খরচ যোগাবে সরকার। বিএনপির সভাপতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন জনগনের টাকা এভাবে খরচ করার অধিকার কারো নেই। শুধুমাত্র একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের বক্তব্য শুনতে রাষ্ট্রের মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড করা হয়েছে।
হিলটন হোটেলে পরিবারের সকলের থাকা খাওয়া নিরাপত্তায় যে বিশাল খরচ হয়েছে তাতে দেশবাসীরমত আমরা প্রবাসীরাও ক্ষুবদ্ধ। এদিকে বংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দিনের ব্যাক্তিগত সফর শেষ করে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন বুধবার। ১২ জুন থেকে শুরু করে ১৭ জুন পর্যন্ত এই সময়ে শেখ হাসিনা যেমন পেয়েছেন প্রবাসীদের একাংশের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, তেমনি প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর প্রতি অন্য একটি অংশের ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যানের নগ্ন প্রদর্শনী। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ব্যানারে একটি পক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবংর্ধনা দিয়েছে; অন্য পক্ষ তাঁকে ‘গণতন্ত্রের ঘাতক’ হিসেবে চি?িত করে ‘ডাউন ডাউন হাসিনা’ শ্লেগান দিয়েছে। অন্যদিকে, একই সফরকে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে আরও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস এডভাইজার ইকবাল সোবহান চৌধুরির সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডনের বাংলা গণমাধ্যমে কর্মরত অধিকাংশ সিনিয়র সাংবাদিককে আমন্ত্রণ না জানানোর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। আর শেখ হাসিনার জন্য আয়োজিত সবংর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রবেশপত্র বিতরণেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংবাদসূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকালে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবক দল, তরুণ দল মহিলা দল ও যুবদল।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন, সেই হিলটন হোটেলের বাইরে, পার্লামেন্টে টিউলিপ সিদ্দিকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে সেখানেও তাঁর প্রতি কালো পতাকা, জুতা প্রদর্শন ও নানা ধরণের ৗোগান দিয়ে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও তাঁর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠণের নেতাকর্মীরা। কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সেই উশৃঙ্খল ও অসভ্য প্রতিবাদের সাক্ষি হননি; সাক্ষি হয়েছে ব্রিটেনের সভ্য সমাজে বসবাসরত সভ্য ভাষার রাজনীতির অনুশীলনকারী জনগণ এবং পর্যটক নগরী লন্ডনে বেড়াতে আসা হাজার হাজার বিদেশী। এই সকল পর্যটক তাঁদের স্মৃতি হিসাবে তাঁদের ক্যামেরায় তুলে নিয়ে গেছে তথাকথিত প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি ও ফুটেজ। যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁদের বিক্ষোভ শেখ হাসিনার চরম অমানবিক, অনৈতিক ও স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতেও এমন কর্মসূচি পালন করা হবে জানানো হয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপির উচ্চ পর্যায় থেকে। তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বলছে, লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমানকে খুশি করার জন্যই বিভিন্ন শহর থেকে লোক ভাড়া করে এনে এসব সমাবেশ করানো হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অতীতে লন্ডন সফরে এসে খালেদা জিয়াও একই ধরণের প্রতিবাদ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইতিহাসেরই প্রত্যাবর্তন। বিলেতে বাংলাদেশী কমিউনিটির সচেতন নেতারা বলছেন, নানা মাত্রিক দ্বন্বকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছি আমরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কমিউনিটি নেতা বলেন: ‘‘একই লোক স্থান, কাল ও পাত্রভেদে তাঁর কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও নৈতিকতায় নিজেকে ভিন্নভাবে প্রদর্শন করছে। অমুক সমিতি-তমুক সমিতিতে একই সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহনশীলতার ভিত্তিতে কাজ করলেও একই লোক আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরোধিতার প্রশ্নে অনেক বেশী নগ্ন ও আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। আবার মসিজদ কমিটি কিংবা অন্য কোনো কমিটিতে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিতর্ক সৃষ্টি করে সেখানেও বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এই বিষয়গুলো আমাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে এবং নিজেদেরকে উন্নত চরিত্র মানসিকতায় বিকশিত করতে হবে।’’ অন্যদিকে, প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার সবংর্ধনা স্থলে প্রবেশ করতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সীমিত আসন সংখ্যার কারণে সবাইকে এই সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রবেশপত্রগুলোর আসম বণ্টন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার স্বজনপ্রীতি ও গ্রুপিংয়ের কারণে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সবংর্ধনাস্থলে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন