ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ৫ জুন, ২০১৫

মিয়ানমারের বর্বরতা, স্তম্ভিত বিবেক! - আবদুল জাব্বার

সম্প্রতি চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে মিয়ানমারে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর চলছে অমানবিক অকথ্য নির্যাতনের স্টিম রোলার। যেন নিজ দেশে তারা পরবাসী। অথচ রাখাইন প্রদেশে মুসলমানদের বসবাস শুরু ১৩শত বছর আগে। এতদিন ধরে বসবাস করে আসা একটি জনগোষ্ঠী সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না, তা হতে পারে না। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে নানা ধরনের সূত্রপাত সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের কাজ চালু রেখেছে। এদের অনেকে বাধ্য হয়ে শরণার্থী হিসেবে দিনাতিপাত করছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে। প্রকৃতপক্ষে তাদের অবস্থা ন্যাটিব
আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকার মায়্যান ও অধিকৃত আরব ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের চাইতেও দুর্বিষহ।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের অত্যাচার নিপীড়ন করে তাড়িয়ে দিয়ে সময়ের ব্যবধানে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যাগত কাঠামোই পাল্টিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টা যেন এমন- রাখাইন রাজ্য যেন রাখাইনদের জন্যই। অন্য কোন জাতি বসবাস করা নিষিদ্ধ। যে জন্য সেখানে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাদের স্থাবর, অস্থাবর ও ওয়াকফ করা সম্পত্তি। মসজিদ ধ্বংস করে প্যাগোডা ও মঠ তৈরি করা হচ্ছে পূর্ণোদ্যমে। এতে বোঝা যায় মুসলমানদের যাবতীয় নিশানা মুছে দিতে খোদ মিয়ানমার সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক তদারক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধানের কাছে বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগণ নয়, বিতাড়নই এ সমস্যার সমাধান। তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘তৃতীয় কোন দেশ চাইলে সেখানে তাদের পাঠানো হবে।’ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিতাড়নতো চলছেই, তৃতীয় দেশেও সেটা চলতে পারে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকানের সঙ্গে বাংলাদেশের আছে ২৬৭ কিলোমিটার সীমান্ত।
রোহিঙ্গারা যদি আরাকানি তথা মিয়ানমারি না হবে, তাহলে ১৯৪৭ সালে বার্মার প্রথম সংবিধান সভার নির্বাচনে কিভাবে তারা ভোট দিয়েছিল?
১৯৫১ সালে তাদের আরাকানের অধিবাসী হিসেবে পরিচয়পত্র দিয়েছিল। বার্মার প্রথম প্রেসিডেন্ট উ নু রোহিঙ্গাদের আরাকানের অধিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে প্রধানমন্ত্রী উ বা রোহিঙ্গাদের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতোই একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করেছেন। ১৯৪৭ সালে অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সানের উদ্যোগে জাতিগত সমঝোতার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত পালং সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা স্বাধীন মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম শাও সোয়ে থাইক বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গারা যদি স্থানীয় আদিবাসী না হয়, তাহলে আমিও তা নই।’ ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন জারির আগে পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অবাঞ্ছিত বলার বাস্তবতা ছিল না। কিন্তু জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকারের প্রতিষ্ঠার দিন থেকে শুরু হয় রোহিঙ্গাদের জীবনে ইতিহাসের কালো অধ্যায়। তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় রোহিঙ্গা ভাষার রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার। শুরু হয় অপারেশন ড্রাগন কিং নামে রোহিঙ্গা বিতাড়ন কর্মসূচি। বর্তমান প্রেসিডেন্টও সম্ভবত সেই কর্মসূচি শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে বার্মা ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ‘অপারেশন গোল্ডেন ঈগল’ নামে কর্মসূচিতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়া শুরু করে। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমারকে তখন পিছু হটতে বাধ্য করেছিল।

মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি নির্বাচনের ভোটার তালিকা এবং বাংলাদেশের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো প্রমাণ করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সফরের সময় সে দেশের সরকার ২৫ হাজার শরণার্থীকে ফেরত নিতে রাজি হয়। এ চুক্তি মিয়ানমার অদ্যাবধি বাস্তবায়ন করেনি। এভাবেই মিয়ানমার সরকার একের পর এক আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ করছে এবং বাংলাদেশের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করছে। এভাবেই গুমরে মরছে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনতা। ২০০৫ সালে উকিয়মিনকে (ওরফে মো: শামছুল আনোয়ারুল হক) রোহিঙ্গা জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে কথা বলায় ৪৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যদিও তিনি বুদিন সাহারা অঞ্চলের ১ নম্বর নির্বাচনী এলাকার পার্লামেন্ট সদস্য। একই অভিযোগে তার সহধর্মিণী ও তিন সন্তানকে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আশির দশকেও মিয়ানমারে মুসলমাননিধন চরম আকার ধারণ করেছিল। যদিওবা মুসলিম-বৌদ্ধ দাঙ্গার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। অথচ প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে হতাহতের মধ্যে নিহতরা সকলেই মুসলমান।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক আইনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার আহবান জানায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জনসংখ্যারভারে ন্যুব্জমান বাংলাদেশকে শরণার্থীদের আশ্রয়ের ব্যাপারে যেভাবে বারবার নোটিশ জারি করছে, মিয়ানমার সরকারকে সম্ভবত ততবার নোটিশ জারি করার প্রয়োজন অনুভব করেন না। আর আমাদের দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাফ সাফ আশ্রয় না দেয়ার বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আলজাজিরা টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। অথচ আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক বাংলাদেশ দায়বদ্ধ এমন উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে। জান বাঁচানোর স্বার্থে কেউ যদি অন্য দেশে প্রবেশ করে তবে কোন সভ্য দেশই তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলতে পারে না।
জান বাঁচানো প্রতিটি মানুষেরই মৌলিক মানবিক অধিকার। সেটি কোন দেশে বিপন্ন হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য যে কোন দেশে আশ্রয় নেয়ার অধিকার রাখে। সেটিই আন্তর্জাতিক নীতি। কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মানবিক বিবেচনায় সরকার চাইলে তাদের আশ্রয় দিতে পারত। এক দিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতন অপর দিকে বাংলাদেশের বিজিবির কঠোর অবস্থানে দিশেহারা মিয়ানমারের নিরীহ মুসলমানেরা। এ পর্যন্ত বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, ভোয়া, নিউইয়র্ক টাইমস, এফএফপি ও মিয়ানমার সরকারি বরাতে ১২০ অথবা ১৫০ জন হতাহতের কথা বলা হয়েছে। অথচ এ হতাহতের সংখ্যা এর চাইতে বহুগুণ বেশি। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে শরণার্থীদের আশ্রয়ের কথা বললেও বিগত সময়ে যে সকল শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের বিষয়টি এখনও সুরাহা তারা করেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমারের সীমানায় বৃহৎশক্তি চীন থাকার কারণে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমারের শরণার্থীদের ব্যাপারে সঠিক কোন সমাধানে আসতে পারছে না। আবার এ দেশটির সাথে খারাপ সম্পর্কের মাধ্যমে সামরিক অবরোধের মুখে পড়ুক তারা তা চান না। কারণ মিয়ানমার পণ্যদ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে বড় একটা ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের সরকার এত দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধান করতে না পারায় পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো সাহায্য করতে এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে, যা অনভিপ্রেত।
বৌদ্ধদের বাণী ‘জীব হত্যা মহাপাপ’। অথচ রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যাযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। কী বিভীষিকা? মানবতা ভূলুণ্ঠিত! কত জীবন নিঃস্ব হলো! আর কতকাল এ অমানবিক আচরণ, পৈশাচিকতার দুর্দণ্ড প্রতাপ ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবে? মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাতিরিক্তই যেন মানবাধিকার রক্ষা! মুসলমানদের প্রশ্নবিদ্ধ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে হত্যা, নির্যাতনের চরম সীমায় উপনীত করাই যেন মানবাধিকারের সংরক্ষণ। মিয়ানমারের বর্বরতায় স্তম্ভিত বিবেক!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন