জনাব আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ প্রখ্যাত আলেম ও জননন্দিত ইসলামী নেতা মরহুম মাওলানা আব্দুল আলীর চতুর্থ পুত্র। মাওলানার সাত ছেলে ও দুই কন্যার মধ্যে সবচেয়ে স্নেহধন্য এ পুত্রকে তিনি আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে গেছেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর এ প্রিয় বান্দাহর মনোবাসনা পূর্ণ করে তাঁর সন্তানকে দেশের শ্রেষ্ঠতম ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে কবুল করেছেন। মরহুম মাওলানা আব্দুল আলী ছিলেন একজন জনদরদী নেতা ও ফরিদপুরের এমএনএ। ফরিদপুরের জেলা জামায়াতের আমীর হওয়ার সাথে সাথে তিনি সেখানকার প্রধান ঈদ জামাতের খতিব ও ইমাম ছিলেন। জামায়াতের আমীর হওয়ার কারণে স্বাধীনতার পর তাঁকে আটক করা হয়। অত্যন্ত উঁচু মানের আলেম ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় হওয়ার কারণে সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধারাসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁর পেছনে নামায আদায়ের জন্য অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবী করেন। বঙ্গবন্ধু ঈদের পূর্ব রাতে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করলে মুসল্লীরা তাঁর পেছনে আনন্দচিত্তে নামায আদায় করেন। ফরিদপুরের কৃতি সন্তানদের তালিকায় তাঁকে স্থান দেয়া হয়েছে এবং ফরিদপুরবাসী তাঁকে ভুলে যাননি; তাঁকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পশ্চিম খাবাসপুর তাঁর বাড়ী যাওয়ার রাস্তাটার নামকরণ করা হয়েছে মাওলানা আব্দুল আলী রোড। এই সাধক ও বরেণ্য আলেম ১৯৭৪ সালে হজ্ব করতে যেয়ে সেখানেই ইন্তেকাল করেন এবং সেই পুণ্যভূমিতেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। আল্লাহ তাঁর এ নেক বান্দাহর ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।
জনাব আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।। আজ তাঁর আপিল শুনানী ছিল। এ জাতির কত বড় দুর্ভাগ্য যে, একজন পুণ্যবান পিতার আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফকৃত সন্তানকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ড প্রদান করা হয়েছে। একজন সাধারণ মানের মুসলমানও এ সব অপরাধ করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে কি করে মানুষের ক্ষতিসাধন করবে। রসূল (সা.) বলেন-‘ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয়, মু’মিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ঠ থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়।‘ আল্লাহ তায়ালার বাণী-‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে।‘ জনাব আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল-জামায়াতের নেতা, এ দ্বীনি সংগঠনে পেশিশক্তি বা অর্থবলে নেতা হওয়া যায়না। যিনি তাকওয়া, ইলম, সদাচারণ ও নেতৃত্বের যোগ্যতায় অগ্রগামী তিনিই নেতা হয়ে থাকেন। জনাব মুজাহিদ পুণ্যবান পিতার সাহচর্যে শৈশব থেকে অনুপম চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাই তিনি পরম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারেন-‘এ হাত দিয়ে জীবনে কাউকে একটি থাপ্পড়ও মারিনি।‘ পিতার সেই শিক্ষার প্রভাব ও আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে তিনি অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এক পয়সারও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা মামলায় তাঁকে আটক করা হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁকে নানাবিধ মামলায় জড়ানো হয়। ১৯৭১ সালে তিনি একজন ছাত্র ছিলেন মাত্র। তাঁর পিতা ছিলেন জামায়াতের জেলা আমীর। তিনি যদি সত্যিই মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকেন তাহলে তো পিতার সাথে তাঁকেও আটকাতে পারতেন। পাক বাহিনীর সহযোগিতার জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন (Bangladesh Collaborators (Special Tribunal) Order 1972) জারী করা হয় এবং এ আইনের আওতায় প্রায় ৪২,০০০ জনকে আটক করা হয়। সে সময়ে ৭৩টি স্পেশাল ট্রাইবুনালে ১১,০০০ আসামীর বিচার হয়; যার মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৭৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। বাকীরা বেকসুর খালাস পায়। আজকে জনাব মুজাহিদসহ যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের কেউ ৪২,০০০ বা ১১,০০০ এর মধ্যে ছিলেন না; এমন কি ২০১০ সালের পূর্বে কোন থানায় একটি মামলাও ছিল না। এর পূর্বেও দু’টার্ম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা সে সময় বিচারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। মূলত ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ফলে তারা উপলব্ধি করে যে, ইসলামী শক্তি ধ্বংস করা ছাড়া আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। ইসলামী শক্তি ধ্বংসে তাদের এ এজেন্ডার সাথে বিশ্বব্যাপি ইসলাম বৈরী শক্তির মিল হওয়ায় মূলত তাদের সমর্থনেই এ বিচারের উদ্যোগ। জনাব মুজাহিদ আজকে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল হলেও ১৯৭১ সালে তিনি উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলেন না। মূলত ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণেই আজকে তিনি বিচারের সম্মুখিন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সবই বিদ্বেষবশত পরবর্তী সময়ে করা। এ প্রসঙ্গে উমর (রা.)-এর উক্তি স্মরণযোগ্য-‘কোন দল যদি কোন হদ-এর জন্য সাক্ষ্য দেয় এবং ঘটনার অব্যবহিত পরেই সাক্ষ্য না দেয়, তবে তারা কোন বিদ্বেষের কারণেই সাক্ষ্য দিয়েছে বুঝতে হবে এবং তাদের সাক্ষ্য গৃহিত হবে না।‘ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজ আপীল শুনানী শুরু হয়েছে। দুনিয়ার জীবনে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য এটা শেষ অবলম্বন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন