গত সপ্তাহে ভারতীয় পুলিশ জামায়াতে ইসলামী হিন্দের ছাত্রসঙ্গঠনের কয়েকজন ভাইকে আটক করে। হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় ঠান্ডা মাথায় তাদের গুলি করা হয়। এরপর মৃতদের হাতে একে ৪৭ ধরিয়ে দিয়ে সাজানো হয় জঙ্গি নাটক।
এদিকে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার পর গতরাতে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে শিবিরের রাজশাহী অঞ্চলের এক নেতাকে। তাকে গ্রেপ্তার করে ধরে নিয়ে যেয়ে পুলিশ অস্বীকার করে এবং গতরাতে গামছা দিয়ে পিঠমোড়া করে বাধা গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়, পুলিশ বরাবরের মতই ছোট্ট নাটক স্ক্রিপ্ট দিয়েছে মিডিয়াকে, 'বন্দুকযুদ্ধ' !
মুসলিম তরুণেরা কেন র্যাডিকালাইজড হচ্ছে এ নিয়ে হাজার হাজার রিসার্চ চলছে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক আর দোহা বেইজড "থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট" গুলোতে। মুসলিম তরুণেরা কেন এ দলে দলে এ পথে আসছে তা বোঝার জন্য এ ছবিই যথেষ্ট।
যে ভাইগুলোকে শহীদ করা হল না তারা আদৌ 'জঙ্গি' ছিলেন, না আমার আপনার মতই কোনদিন একে ৪৭ ধরেছেন। ভারতীয় পুলিশ নিজেরাই তাদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র যাতে তাদের জঙ্গি প্রমাণ করে নিপীড়ন করা যায়। তরুণেরা এমনিতেই "র্যাডিকেল" হয়না।
কিছুদিন আগে নাইজেরিয়ার একটা গ্রুপ যাদেরকে মিডিয়ায় "বোকো হারাম" বলা হয় তাদের উপর কিছুটা পড়াশোনার সুযোগ হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে আজ থেকে এক দশক আগে যদি আপনি তাকান, দেখবেন এই গ্রুপটি ছাত্রশিবিরের চেয়েও নিরীহ একটি ছাত্রসংগঠন ছিল। শিবির তো হল দখল করে, হরতাল করে, মাঝে মধ্যে ককটেল ফুটায়; "বোকো হারাম" এগুলোর মধ্যেও ছিলনা। কিন্তু যখন নাইজেরিয়ার আর্মির নির্যাতন লিমিট ক্রস করলো, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হল, এরপর আর তারা নিরীহ থাকেনি; অথবা থাকতে পারেনি।
মিসরের সিনাই বেইজড সংগঠন আনসার বাইতিল মাকদিস ২০১১ সালে শুরু হওয়ার পর খুব বড় কোন সংস্থা ছিলনা; না মিসরের সেনাবাহিনীর কোন সদস্যকে তাদের হাতে প্রাণ দিতে হত। কিন্তু যখন সিসি আর তার সেনাবাহিনী রাবেয়া স্কয়ারে হাজার নিরপরাধ ব্যাক্তিকে শহীদ করলো, ইসরাইলের জন্য সিনাইয়ের হাজার হাজার অধিবাসীকে শহীদ করা হল, পরিণামে মিসরের জন্য কি আসলো? এখন কোন সপ্তাহ অতিবাহিত হয়না যেখানে মিসরের আর্মি বা পুলিশ মারা যায়না। মিসরের আর্মির অনেক সেনা- অফিসার সেই ঘটনার পর ডিফেক্ট করে সিনাইয়ে চলে গেছেন। দেখা যাচ্ছে যে মিসরীয় আর্মি অফিসার ২০১২ সালে আর্মিতে কাজ করতেন, সেই অফিসারই ২০১৫ সালে সিনাইতে গিয়ে এখন মিসরীয় সাবেক কলিগদের উপর হামলা পরিচালনা করে।
এসব থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা না নিলে বাংলাদেশেও যে এমন পরিস্থিতি আসবেনা এমন বলা কঠিন। ৫ মে রাতের গণহত্যার কথা কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা এখনও ভুলে যায়নি। এ দেশে সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির সশস্ত্র পথে না হাটতে চাইলেও সরকার আর তার মিডিয়া মনে হচ্ছে একে "জঙ্গী সংগঠন" হিসেবে প্রমাণ করতে বদ্ধ পরিকর। সরকারের কি কখনো ভেবে দেখেছে ছাত্রশিবিরের প্রায় এক লক্ষ সদস্য যদি আজ রাতে সিদ্ধান্ত নেয় তারা মিডিয়ার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী 'জঙ্গী' হবে তাহলে কালকে আ'লীগ নেতারা ভারতে পালানোর সুযোগটুকু পাবেনা।
[কালেক্টেড]
ছবি: ভারতে পুলিশের গুলিতে নিহত মুসলিম ছাত্রনেতাদের একজন (হ্যান্ডকাফ লাগানো) এবং গতরাতে রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত শিবির নেতা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন