এ মাস ত্যাগের, ভোগের নয়। এ মাস সহমর্মিতার, স্বার্থপরতার নয়। রমজান নৈতিক সংযমের মাস। এটা নিছক অর্থনৈতিক সঞ্চয়ের মাস নয়, যা অনেক ব্যবসায়ীর আচরণে প্রতিভাত হয়। মাহে রমজানে আমরা রকমারি আয়োজনে মেতে উঠি মুসলমান হিসেবে প্রকৃত প্রয়োজন বিস্মৃত হয়ে। আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনুষ্ঠান বড়। তাই ঘটা করে ইফতার ‘পার্টি’। কিন্তু দরিদ্র পড়শির ইফতারের সামর্থ্য আছে কি না, খবর নিই না। এ মাসে প্রচার করে মানুষ জমিয়ে জাকাত হিসেবে দেয়া হয় পরিধানের অযোগ্য শাড়ি-লুঙ্গি। অথচ জাকাত যে আত্মকর্মসংস্থান ওদারিদ্র্য মোচনের বলিষ্ঠ হাতিয়ার, সেটা ডিগ্রিধারী মুসলমানেরাও উপলব্ধি করেন না।
রমজান তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় মনে জাগ্রত আর কাজে প্রতিফলিত করার মাস। তাহলেই ঈমানদারের প্রকৃত মুনাফা অর্জিত হবে, যা তিনি মজুদ করবেন অনন্ত পরকালের জন্য। আল কুরআনে যে লাভজনক তেজারত বা ব্যবসায়ের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে, এই মুনাফা সেই পবিত্র ব্যবসায় বা দ্বীনদারির। এটা বাজারিপণ্যের দাম বাড়িয়ে রোজাদারকে কষ্ট দেয়ার অসৎ প্রবণতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মাপে আর ওজনে কম না দিতে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের ক’জন ব্যবসায়ী এই সতর্কতা বজায় রাখেন? এমনকি রোজার মাসেও আমরা এ ব্যাপারে সজাগ হই না। যেসব ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে, ওজন ও মাপে কম দিয়ে দুনিয়ার লাভকে বড় করে দেখেন, তাদের কেউ কেউ দৃশ্যত ধর্ম পালনকারী হলেও আসলে ধর্মীয় চেতনা তাদের নেই। তা থাকলে সমাজ ও মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতেন তারা। আজ সমাজে ন্যায়বিচার ও নীতিনিষ্ঠার অভাব এবং বৈষম্য-বেইনসাফির প্রাদুর্ভাব। রোজায় অগ্নিমূল্যসহ ব্যবসায়িক অসততা এর একটি উপসর্গ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন