আজকের শিশুই আগামী দিনের দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর। শিশুর মাঝেই প্রতিটি মা-বাবা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। পিতা-মাতার আশা আকাংখা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ে শিশুর মাধ্যমে। মানব শিশু আলহ্মাহ পাকের শ্রেষ্ঠ দান। প্রতিটি শিশুই অফুরন্ত ও মেধা প্রতিভা নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। বেড়ে উঠার পরিবেশ যদি বৈরী হয়, শিশুর মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে শিশুর পিতা-মাতা ও অভিভাবককে সর্বধা সচেতন থাকতে হয়।
শিশুর মন ঔৎসুক্যে ভরা থাকে। তার মনে প্রতনিয়িত অজ্র প্রশ্ন তৈরি হয়। নতুন কিছু দেখলেই তার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। তাই শিশু সর্বদা প্রশ্ন করতে থাকে, কথা বলতে থাকে। শিশুর বেশি কথা বলা,বেশি প্রশ্ন করা- বাচালতা নয়, বরং এটা তার আগ্রহ এবং মেধা বিকাশের পরিচয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর কথা বলা এবং প্রশ্ন করাকে ভাল চোখে দেখা হয় না। এ জন্য তাকে বকাঝকা করা হয়, তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। এটা উচিৎ নয়। অনেক সময় দেখা যায় শিশু একটির পর একটি প্রশ্ন করতে থাকে। এটাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালভাবে গ্রহন করা হয় না। বেশি কথা বলায়, বেশি প্রশ্ন করায় তাকে শাসন করা হয়। মনস্তাত্বিক দিক দিয়ে এটা খুবই অনুচিৎ। কারণ শিশু সবার সাথে মেশে না, সবার সাথে প্রাণ খোলে কথা বলে না। আপনাকে প্রশ্ন করছে,আপনার সাথে অনবরত কথা বলছে. তার মানে সে আপনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় আপনার উচিৎ হবে তার কথাগুলো মনযোগ সহকারে শুনা। যতটা সম্ভব তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া। যদি তা না করেন শিশু হতাশ হয়ে পড়বে, সে ভয় পেয়ে যাবে, ভীতু হয়ে পড়বে। তার মন ভেংগে যাবে।
চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক কারণে আপনার যতই তাড়া থাকুক, কোন অবস্থাতেই শিশুকে অবহেলা করা যাবে না। অনেক মা-বাবা কিংবা অভিভাবককে দেখা যায়, শিশু কোন কথা বলতে গেলেই তাকে থামিয়ে দেন। এতে তার কোমল মনে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। শিশু মনে যদি একবার কোন বিষয়ে দাগ কেটে যায়, সারাজীবন তা মুছে না।
আপনি হয়ত বলতে পারেন আপনার প্রচন্ড ব্যস্ততা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন এমতাবস্থায় শিশুর কথা শুনার বা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার অবকাশ আপনার নেই। হতে পারে আপনি একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন- আপনার জন্য আপনার শিশুর মেধা বিকাশ, তাকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কী হতে পারে। এত পরিশ্রম, এত ব্যস্ততা এগুলো কার জন্য? আপনি কার জন্য এতসব করছেন?
শুধামাত্র পিতা-মাতা নন, একই কথা প্রযোজ্য শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যার শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন তাঁদের জন্যও। আমাদের দেশে বহু প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক শ্রেণির শিক্ষকদের হাতে। শিশু মনোবিজ্ঞান জানা নেই এমন লোকের হাতে যদি শিশু গড়ার দায়িত্ব দেয়া হয়, হিতে বিপরীত হতে বাধ্য।
আামদের দেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁদের আত্মজীবনীতে লেখেছেন- পরিবার নয়, শিক্ষকই তাঁকে গড়েছেন। কোন কোন শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে প্রশ্ন করাকে বে-আদবি মনে করে শিক্ষার্থীকে নানাভাবে নাজেহাল করেন। আবার অনেক শিক্ষক অগণিত শিক্ষার্থীর মধ্যে মেধাবী শিক্ষার্থী খুঁজেন। তাঁরা খুঁজতে থাকেন কার মাঝে জানার আগ্র বেশি, কে বেশি প্রশ্ন করে।
অনেক সময় দেখা যায় শিশু বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাখির সাথে কথা বলছে। লক্ষ্য করুন সে কখন সে এরকম করে। যখন তার কথা কেউ শুনে না, তার সাথে কথা বলার মত কেউ থাকে না। শিশুকে দেখা যায় তাকে দেয়া খাবার সে পরম আনন্দে বাইরে পাখির জন্য ছুঁড়ে দিচ্ছে। পোষা বিড়ালের পেছনে পেছনে দৌঁড়াচ্ছে। তার খাবার নিজে না খেয়ে বিড়ালকে আদর করে ডেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কেউ কেউ মনে করতে পারে এটা বদ অভ্যাস এবং অপচয়। না, এটা অপচয় নয়, এটা দোষও নয়, বরং এটা শিশুর মানবিক সত্ত্বার বিকাশের লক্ষণ।
কথা বলা এবং প্রশ্নের মাধ্যমে শিশুর মেধা বিকাশ ঘটে। নিরব থাকা শিশুর জন্য স্বাভাবিকতা নয়। আপনার শিশুর মেধা বিকাশে তাকে কথা বলতে দিন, তাকে প্রশ্ন করতে দিন। মনযোগ সহকারে তার কথা শুনুন, তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন