খাবার ও পানি মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য বস্তু। মানুষ শত্রুকেও খাবার ও পানি থেকে বঞ্চিত করে না। বন্দী কিংবা মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিকেও খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়।
আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে কারো খাবার বা পানি বন্ধ করে দেয়া ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের রাজনীতি এতটাই শত্রুভাবাপন্ন হয়ে পড়েছে যে, বিরোধী রাজনৈতিক নেত্রীর অফিসে খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে এই অফিসের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার অফিসে অবস্থান করছেন। সেখানে তার সাথে রাজনৈতিক সহযোগী ও অফিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা অবস্থান করছেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে খাবার সরবরাহে বাধা দেয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাইরে থেকে খাবার না আসার কারণে অফিসে রাখা শুকনো খাবার খেয়ে তারা দিন পার করছেন।
গণমাধ্যমে প্রতিদিন দেখানো হচ্ছে কিভাবে খাবার ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে খাবার বন্ধ করার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অফিসে আছেন। তার অনেক দরদি আছে। তারা লিখছে তার খাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে খাওয়া যাবে কেন? অফিসে যাবে, অফিস শেষে বাড়ি যাবে, বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবে।
একজন নাগরিক কোথায় থাকবেন বা কোথায় খাবেন সেটি তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। রাষ্ট্র ঠিক করে দিতে পারে না কোন লোক কোথায় খাবেন বা কোথায় থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে যে খাবার যাচ্ছে না তা তিনি অবগত এবং একই সাথে এই কাজকে তিনি সমর্থন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থান তার মর্যাদার সাথে শুধু বেমানানই নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিপক্ষের খাবার বন্ধ করে দেয়ার নজির আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অফিসে খাবার বন্ধ করার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন হননের রাজনীতিতে রূপ নিয়েছে।
সাধারণ রাজনৈতিক কালচার ও সভ্যতা-ভব্যতার সীমা অতিক্রম করে প্রতিপক্ষকে দমনের চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে। এমন রাজনীতি দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বহাল থাকলে ভবিষ্যতে অাজকের ক্ষমতাসীনদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন